‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য একটা আন্দোলন করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ২১
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৩৭

দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য আবার একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলন ছাড়া মানুষকে সচেতন করা সম্ভাব্য নয় বলে দাবি করেছেন এক গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেফ ফুড অ্যালায়েন্সের উদ্যোগে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বাংলাদেশ সেফ ফুড অ্যালায়েন্সের সভাপতি কাজী জিয়া শামসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বাবু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। 

বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘দিনদিন আমাদের খাদ্য তার ঐতিহ্যগত নিরাপদ বলয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির প্রাকৃতিক ভান্ডার, দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশে নিরাপদ খাদ্য এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, কলকারখানার বর্জ্য, রং ও কেমিক্যাল, অপ্রয়োজনীয় প্রিজারভেটিভ, কারবাইড, ফরমালিন—এসবের যথেচ্ছ ব্যবহার এখন প্রকাশ্য। ফলে মাটি, পানি, বাতাসসহ গোটা পরিবেশ প্রকৃতিই মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে খোলা ও নোংরা জায়গায় যত্রতত্র বিভিন্ন খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে এ ধরনের খাবার খেয়ে মানুষ নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। 

আরও বলা হয়, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ শিশুর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। এসব বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। এখন সময় সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে। 

বিসেফ ফাউন্ডেশনের অ্যাডভাইজার ড. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য আবার একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে।’

রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) পরিচালক সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘আমি যা খেতে চাই, সেটা খেতে পারছি না, এই জায়গায়টায় আমাদের যেতে হবে। আমাদের আগে মনের জায়গাটা ঠিক করতে হবে, তারপর আন্দোলন করতে হবে।’ 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘কিছু কোম্পানির কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। যে খাবারটা ভালো, সেটা জানার পরেও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে অরগানিক খাবার থাকলেও সেটা পাওয়া যায় না। প্রতিটি খাবার উৎপাদন থেকে খাওয়ার আগপর্যন্ত ভেজালে পরিপূর্ণ।’ 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশে কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের দাবিদার। সচিব, ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যরা যে গুরুত্ব পান, সেটা তাঁরা পান না। ঢাকায় কিছু অভিযান করে সংবাদমাধ্যম আসা যায়, তবে সেটি কার্যকর কিছু হয় না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্যের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে সংযুক্ত করতে হবে। এতে দেশের সব জায়গায় সচেতনতা পৌঁছে যাবে। রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের বক্তব্যে এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে মানুষ একটু শুনবে।’ 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছুই করার থাকে না। আমাদের এখান থেকে কেউ কখনো লাইসেন্স নেয় না। আমরা জানিই না বাংলাদেশে কতজন খাদ্য নিয়ে ব্যবসা করে। সারা দেশে গত ১৫ বছর অনেক ল্যাব হয়েছে, তবে লোকবল নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একটা হোটেলের পাশে ড্রেন থাকে, শৌচাগার পরিষ্কার না। কিন্তু এসব বিষয় কেমন হতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয় না। পাবলিক যদি খাদ্য নিয়ে একটা জায়গা থেকে লাইসেন্স নিত, তাহলে সুবিধা হতো। ২০১৩ সালে আইন হয়েছে আর ২০২০ সাল থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে।’ 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক ব্রাত্য আমিন, নিরাপদ শপের শাহজাহান পাটোয়ারী, ক্ষ্যাপাজয় বাজারের সোহেল আহমেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত