উদ্যোগেও কম ভোটার, গ্রামে ভোট পড়ে বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪: ০০
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫: ৫৭

নানা উদ্যোগ, আহ্বান ও তৎপরতায়ও তুলনামূলক কম ভোটার উপস্থিতি, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিছু অনিয়ম- অভিযোগ ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গতকাল রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে টানা এই ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। কেন্দ্রে ঢুকে ১২টি বইয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারায় নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে একই দলের প্রার্থী ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণও বাতিল করা হয়। বিভিন্ন অভিযোগ এনে গতকাল ভোট চলাকালে ২৩টি আসনের ৩০ প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশলও নেয়।

বিএনপি নির্বাচন ঘিরে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয়, যা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার সকাল ৬টায়। নির্বাচন কমিশন ২ ঘণ্টা পরপর ভোটের হার জানায়। ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, গুরুতর সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বেলা ৩টায় এই হার ছিল প্রায় ২৭ শতাংশ।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রেই সকালে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। রাজধানী এবং শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর-গ্রাম সবখানেই ভোটার বেড়েছে। যেসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, সেসব আসনে ভোটার উপস্থিতিও ছিল বেশি। রাজধানী ঢাকা-৪ ও ৫ আসনে জমজমাট লড়াই হয়েছে। তারপরও ভোটের হার খুব বেশি নয়। এই দুই আসনের কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের কর্মীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ভেতরে ভোটারদের তেমন ভিড় ছিল না।

আজকের পত্রিকার সারা দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন ছিল না। কোথাও কোথাও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ এবং কুমিল্লায় দুজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা-১৪ আসনের কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে (ফলাফল বিবরণী) স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছিল।

তবে মুন্সিগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের। সিইসি বলেন, ছোটখাটো ৩০-৩৫টি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের পাশে ককটেল ফাটানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের একটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর ভোট বর্জন করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। পরে ওই বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র দুটির ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়।

সকালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির কর্মীরা। চট্টগ্রাম-১০ আসনের পাহাড়তলী কলেজকেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে রায়গঞ্জ উপজেলায় জাল ভোট দিতে আসা দুজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে নৌকার কর্মীদের ধাওয়ার মুখে পড়েন। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত দুজন আহত হন। ময়মনসিংহে একটি কেন্দ্রে ‘প্রকাশ্যে সিল মারা’ এবং ‘নৌকার পক্ষে’ কাজ করার অভিযোগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

ঢাকার নিজস্ব প্রতিবেদকেরা জানান, ঢাকার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের চিত্র ছিল মোটামুটি একই রকম। কেন্দ্রের বাইরে ছিল বড় জটলা, কর্মীদের ঘোরাফেরা। তবে ভেতরে বেশ ফাঁকা। এই কেন্দ্রগুলোতেও সব মিলিয়ে ৩৫-৪০ শতাংশ করে ভোট পড়েছে বলে কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত