সুপ্রিয় সিকদার
হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যখন সবাইকে আশঙ্কায় ফেলছে, তখন এটিই আশার কারণ হচ্ছে কোনো কোনো মানুষের জন্য। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে ভ্যানে করে আটার রুটি ও ভাত বিক্রি করা সাদিয়া এমনই একজন।
হাসপাতালে রোগী বাড়লে, বাড়ে তাঁদের সঙ্গে আসা স্বজনের সংখ্যা। আর হাসপাতালে আসা মানুষেরাই সাদিয়ার রুটি-ভাতের ক্রেতা। ফলে এই লকডাউনের সময়ে নানা কায়দা করে ব্যবসা চালানো সাদিয়ার পক্ষে পুঁজি তুলে কিছুটা লাভের মুখ দেখা সম্ভব হয়; জোটে ভাত।
করোনা পরিস্থিতি দিন দিন বাজে আকার ধারণ করছে। বেশ কিছু দিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুই শ বা তার আশপাশে থাকছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরোপ হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই রোগীর বাড়তি সংখ্যাই সাদিয়ার মতো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ভাত জোটার অন্যতম উপায়। শুনতে যেমনই লাগুক—এটাই সত্য।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে একটি ভ্যানের চারপাশে পাটাতন দিয়ে সাদিয়া নিজের মতো করে বানিয়েছেন দোকান। সেখানেই কোনো রকমে চলে তাঁর বেচাবিক্রি। লকডাউনের মধ্যে এই কোনো রকম চলাও থমকে যাওয়ার জোগাড়। একে তো স্বাস্থ্য সতর্কতার অংশ হিসেবে কড়াকড়ি। জরুরি সেবা, কাঁচাবাজারসহ গুটিকয় বিষয় ছাড়া সব বন্ধ। এ অবস্থায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানই হিমশিম খাচ্ছে। সাদিয়াদের অবস্থা তো সে ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আগে রাস্তায় পিঠা আর ডাব বিক্রি করতেন সাদিয়া। চলছিল ভালোই। তবে লকডাউনের শুরুতে লোকসানের মুখ দেখে পেশা পাল্টে ফেলেছেন। এখন বিক্রি করেন সেদ্ধ আটার রুটি ও ভাত। এই দিয়ে কোনো রকমে ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সংসার চলছে সাদিয়ার। বললেন, ‘লকডাউন আসার আগে ব্যবসা ভালো ছিল। প্রতিদিন যা ইনকাম করতাম, তাই দিয়ে সংসার খুব ভালো করে চলে যেত। তবে এখন প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে রুটি আর ভাত বিক্রি করি। তা দিয়ে দিন যায় না বললেই চলে।’
ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন, মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ। স্বামী বাড়িতে বসে আটার রুটি, ভাত, তরকারি রান্না করে দেন। তা সারা দিন বিক্রি করেন সাদিয়া। কোনো কোনো দিন লাভের মুখ দেখেন না জানিয়ে সাদিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলে মোটামুটি ভালোই বেচাবিক্রি হয়। তবে যেদিন রোগীর চাপ থাকে না, সেদিন বসেই থাকতে হয়। লকডাউনের কারণে আরও বেচাবিক্রি কমেছে। মানুষ বাইরের খাবার খাইতে চায় কম। যা ইনকাম হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট।’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বারবারই আসছে লকডাউনের ঘোষণা। এ অবস্থায় ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। অনেকেই করেছেন পেশা বদল। তারপরও যেন জীবন চলে না। এমনই একজনের সঙ্গে দেখা হলো আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে। চা বিক্রি করেন তিনি। কথা বলতে চাইলেন না। কারণ, তিনি যে চা বিক্রি করেন, তা তাঁর পরিবার জানে না। ভয়, আলাপের সূত্র ধরে যদি তাঁর বর্তমান পেশা সম্পর্কে পরিচিতজনেরা জেনে যান!
গত বছরের মার্চে প্রথম চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন আরোপ হয়েছিল দেশে। এর প্রভাব অর্থনীতির ওপর ভয়াবহভাবে পড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দাবি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় লকডাউনের প্রথম ৬৬ দিনে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছিলেন, লকডাউনে নতুন দরিদ্র ও অতিদরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ বা প্রায় ৬ কোটি। শ্রেণিকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তবে অতি ধনী শ্রেণির ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
এ তো জানা কথাই যে, যেকোনো দুর্যোগের প্রথম ধকলটি যায় দরিদ্র শ্রেণির ওপর দিয়ে। করোনার কারণে সৃষ্ট সার্বিক দুর্যোগেও এর অন্যথা হয়নি। গত বছর শুরু হওয়া সেই লকডাউন থেমে থেমে এখনো চলছে। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে এখনো চলছে কঠোর লকডাউন, বন্ধ রয়েছে সব প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় বের হতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারি সহায়তার কথা বলা হলেও তা ছুঁতে পারেনি অনেক গরিবকে; বরং কর্মহীন হয়ে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বললেও কম বলা হবে।
এমনই একজন আরিফ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়। আগে রাজধানীর বাসে বাসে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন তো গণপরিবহন বন্ধ। ফলে পত্রিকা বিক্রি দিয়ে আর চলছে না। অন্যদের মতো পারেননি পেশা বদলাতেও। বললেন, ‘লকডাউনে আগের মতো প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি হয় না। প্রতিদিন ১০-১৫ কপি পত্রিকা বিক্রি করতে পারি, যা দিয়ে ভাতের পয়সাও হয় না। বাড়ি তো যেতেই পারি না, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্যও টাকা পাঠাতে পারি না। শাহবাগে যাত্রীছাউনিতে থাকার ঘরটুকুও কেড়ে নিয়েছে প্রশাসন, থাকি রাস্তায় রাস্তায়।’
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা আরিফ পাঁচ-সাত বছর ধরে ঢাকায় পত্রিকা বিক্রি করেন। ভালোই চলছিল সবকিছু। কখনো শাহবাগ, কখনো মতিঝিল, কখনোবা গুলিস্তান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ‘পত্রিকা নেবেন, পত্রিকা’—হাঁক ছেড়ে সরব রাখতেন চারপাশ। এখন সব নিঝুম। নিঝুম হয়ে থাকেন তিনিও। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ২০০-৩০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতেন। যা আয় হতো, তা দিয়ে নিজের জীবন যেমন চলত, তেমনি বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা ও ভাইবোনেরও দেখভাল করতে পারতেন। কিন্তু বারবার আসা লকডাউন বাসের সঙ্গে সঙ্গে, নাগরিক চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়েছে আরিফের জীবনও।
কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আরিফ। বললেন, শাহবাগ মোড়ে বারডেম হাসপাতালের পাশের যাত্রীছাউনিতে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত কারণে তাঁর সে আবাসস্থল হারিয়েছেন। এখন যেখানে রাত হয়, সেখানেই একটু শুয়ে ঘুমিয়ে নেন। টাকাপয়সা না থাকায় বাড়িও যেতে পারছেন না। নিজে হার্নিয়ার রোগী। শারীরিক জটিলতার কারণে অন্য কোনো পেশাতেও নিজেকে জড়াতে পারেন না।
তারপরও আশাবাদী আরিফ—সুদিন ফিরবে; আবার পত্রিকা বিক্রি বাড়বে। জীবন স্বাভাবিক হবেই।
আরিফের চোখের এই আশা-নিরাশার ছায়া ভুলতে না ভুলতেই পথ আগলে দাঁড়ান আশরাফুল ইসলাম। আগারগাঁও এলাকাতেই দেখা তাঁর সঙ্গে। ফুটবলপ্রেমী আশরাফুল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন জয়পুরহাটে। বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় খেলতেও যেতেন। কিন্তু ওটুকুই। আর এগোয়নি। ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করে বিয়ে করেন। সম্প্রতি কাজকর্ম না থাকায় ঢাকায় এসেছেন। কাজ বলতে আর কিছু খুঁজে পাননি। যাত্রাবাড়ী এলাকার এক রিকশা গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে দিন চুক্তিতে চালান এখন। তবে লকডাউনের কারণে আয় কমেছে।
আশরাফুল বলেন, লকডাউনের আগে অর্ধেক বেলা রিকশা চালালে যে আয় হতো, এখন সারা দিন চালিয়েও সে আয় হয় না। যাত্রীর দেখা মেলে না বললেই চলে।
সাদিয়া, আরিফ বা আশরাফুলদের ভরসা এখন জরুরি প্রয়োজনে সড়কে বের হওয়া মানুষেরা। সাদিয়া যেমন নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন, তেমনি আরিফ রাজধানীর শাহবাগ বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার আশপাশে ঘোরেন পত্রিকা নিয়ে। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনেরা তাঁদের কাছ থেকে রুটি বা ভাত কিনে খান, চাইলে পত্রিকা কিনে পড়েন। আর আশরাফুলের মতো রিকশাচালকদের জন্য রোগী বা রোগীর স্বজনদের বহন করাই এই কড়াকড়ির সময়ে তুলনামূলক সহজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশ্নের একটা জবাব অন্তত তখন তাঁদের কাছে থাকে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ায় দরজায় খিল এঁটে যারা শঙ্কায় ভুগছেন, তাঁদের থেকে এই পথবাসী মানুষদের জীবন একেবারে আলাদা।
হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যখন সবাইকে আশঙ্কায় ফেলছে, তখন এটিই আশার কারণ হচ্ছে কোনো কোনো মানুষের জন্য। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে ভ্যানে করে আটার রুটি ও ভাত বিক্রি করা সাদিয়া এমনই একজন।
হাসপাতালে রোগী বাড়লে, বাড়ে তাঁদের সঙ্গে আসা স্বজনের সংখ্যা। আর হাসপাতালে আসা মানুষেরাই সাদিয়ার রুটি-ভাতের ক্রেতা। ফলে এই লকডাউনের সময়ে নানা কায়দা করে ব্যবসা চালানো সাদিয়ার পক্ষে পুঁজি তুলে কিছুটা লাভের মুখ দেখা সম্ভব হয়; জোটে ভাত।
করোনা পরিস্থিতি দিন দিন বাজে আকার ধারণ করছে। বেশ কিছু দিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুই শ বা তার আশপাশে থাকছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরোপ হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই রোগীর বাড়তি সংখ্যাই সাদিয়ার মতো দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ভাত জোটার অন্যতম উপায়। শুনতে যেমনই লাগুক—এটাই সত্য।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে একটি ভ্যানের চারপাশে পাটাতন দিয়ে সাদিয়া নিজের মতো করে বানিয়েছেন দোকান। সেখানেই কোনো রকমে চলে তাঁর বেচাবিক্রি। লকডাউনের মধ্যে এই কোনো রকম চলাও থমকে যাওয়ার জোগাড়। একে তো স্বাস্থ্য সতর্কতার অংশ হিসেবে কড়াকড়ি। জরুরি সেবা, কাঁচাবাজারসহ গুটিকয় বিষয় ছাড়া সব বন্ধ। এ অবস্থায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানই হিমশিম খাচ্ছে। সাদিয়াদের অবস্থা তো সে ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আগে রাস্তায় পিঠা আর ডাব বিক্রি করতেন সাদিয়া। চলছিল ভালোই। তবে লকডাউনের শুরুতে লোকসানের মুখ দেখে পেশা পাল্টে ফেলেছেন। এখন বিক্রি করেন সেদ্ধ আটার রুটি ও ভাত। এই দিয়ে কোনো রকমে ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সংসার চলছে সাদিয়ার। বললেন, ‘লকডাউন আসার আগে ব্যবসা ভালো ছিল। প্রতিদিন যা ইনকাম করতাম, তাই দিয়ে সংসার খুব ভালো করে চলে যেত। তবে এখন প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে রুটি আর ভাত বিক্রি করি। তা দিয়ে দিন যায় না বললেই চলে।’
ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন, মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ। স্বামী বাড়িতে বসে আটার রুটি, ভাত, তরকারি রান্না করে দেন। তা সারা দিন বিক্রি করেন সাদিয়া। কোনো কোনো দিন লাভের মুখ দেখেন না জানিয়ে সাদিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলে মোটামুটি ভালোই বেচাবিক্রি হয়। তবে যেদিন রোগীর চাপ থাকে না, সেদিন বসেই থাকতে হয়। লকডাউনের কারণে আরও বেচাবিক্রি কমেছে। মানুষ বাইরের খাবার খাইতে চায় কম। যা ইনকাম হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট।’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বারবারই আসছে লকডাউনের ঘোষণা। এ অবস্থায় ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। অনেকেই করেছেন পেশা বদল। তারপরও যেন জীবন চলে না। এমনই একজনের সঙ্গে দেখা হলো আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে। চা বিক্রি করেন তিনি। কথা বলতে চাইলেন না। কারণ, তিনি যে চা বিক্রি করেন, তা তাঁর পরিবার জানে না। ভয়, আলাপের সূত্র ধরে যদি তাঁর বর্তমান পেশা সম্পর্কে পরিচিতজনেরা জেনে যান!
গত বছরের মার্চে প্রথম চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন আরোপ হয়েছিল দেশে। এর প্রভাব অর্থনীতির ওপর ভয়াবহভাবে পড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দাবি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় লকডাউনের প্রথম ৬৬ দিনে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছিলেন, লকডাউনে নতুন দরিদ্র ও অতিদরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ বা প্রায় ৬ কোটি। শ্রেণিকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তবে অতি ধনী শ্রেণির ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
এ তো জানা কথাই যে, যেকোনো দুর্যোগের প্রথম ধকলটি যায় দরিদ্র শ্রেণির ওপর দিয়ে। করোনার কারণে সৃষ্ট সার্বিক দুর্যোগেও এর অন্যথা হয়নি। গত বছর শুরু হওয়া সেই লকডাউন থেমে থেমে এখনো চলছে। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে এখনো চলছে কঠোর লকডাউন, বন্ধ রয়েছে সব প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় বের হতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারি সহায়তার কথা বলা হলেও তা ছুঁতে পারেনি অনেক গরিবকে; বরং কর্মহীন হয়ে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বললেও কম বলা হবে।
এমনই একজন আরিফ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়। আগে রাজধানীর বাসে বাসে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন তো গণপরিবহন বন্ধ। ফলে পত্রিকা বিক্রি দিয়ে আর চলছে না। অন্যদের মতো পারেননি পেশা বদলাতেও। বললেন, ‘লকডাউনে আগের মতো প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি হয় না। প্রতিদিন ১০-১৫ কপি পত্রিকা বিক্রি করতে পারি, যা দিয়ে ভাতের পয়সাও হয় না। বাড়ি তো যেতেই পারি না, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্যও টাকা পাঠাতে পারি না। শাহবাগে যাত্রীছাউনিতে থাকার ঘরটুকুও কেড়ে নিয়েছে প্রশাসন, থাকি রাস্তায় রাস্তায়।’
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা আরিফ পাঁচ-সাত বছর ধরে ঢাকায় পত্রিকা বিক্রি করেন। ভালোই চলছিল সবকিছু। কখনো শাহবাগ, কখনো মতিঝিল, কখনোবা গুলিস্তান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ‘পত্রিকা নেবেন, পত্রিকা’—হাঁক ছেড়ে সরব রাখতেন চারপাশ। এখন সব নিঝুম। নিঝুম হয়ে থাকেন তিনিও। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ২০০-৩০০ কপি পত্রিকা বিক্রি করতেন। যা আয় হতো, তা দিয়ে নিজের জীবন যেমন চলত, তেমনি বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা ও ভাইবোনেরও দেখভাল করতে পারতেন। কিন্তু বারবার আসা লকডাউন বাসের সঙ্গে সঙ্গে, নাগরিক চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়েছে আরিফের জীবনও।
কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আরিফ। বললেন, শাহবাগ মোড়ে বারডেম হাসপাতালের পাশের যাত্রীছাউনিতে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত কারণে তাঁর সে আবাসস্থল হারিয়েছেন। এখন যেখানে রাত হয়, সেখানেই একটু শুয়ে ঘুমিয়ে নেন। টাকাপয়সা না থাকায় বাড়িও যেতে পারছেন না। নিজে হার্নিয়ার রোগী। শারীরিক জটিলতার কারণে অন্য কোনো পেশাতেও নিজেকে জড়াতে পারেন না।
তারপরও আশাবাদী আরিফ—সুদিন ফিরবে; আবার পত্রিকা বিক্রি বাড়বে। জীবন স্বাভাবিক হবেই।
আরিফের চোখের এই আশা-নিরাশার ছায়া ভুলতে না ভুলতেই পথ আগলে দাঁড়ান আশরাফুল ইসলাম। আগারগাঁও এলাকাতেই দেখা তাঁর সঙ্গে। ফুটবলপ্রেমী আশরাফুল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন জয়পুরহাটে। বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় খেলতেও যেতেন। কিন্তু ওটুকুই। আর এগোয়নি। ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করে বিয়ে করেন। সম্প্রতি কাজকর্ম না থাকায় ঢাকায় এসেছেন। কাজ বলতে আর কিছু খুঁজে পাননি। যাত্রাবাড়ী এলাকার এক রিকশা গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে দিন চুক্তিতে চালান এখন। তবে লকডাউনের কারণে আয় কমেছে।
আশরাফুল বলেন, লকডাউনের আগে অর্ধেক বেলা রিকশা চালালে যে আয় হতো, এখন সারা দিন চালিয়েও সে আয় হয় না। যাত্রীর দেখা মেলে না বললেই চলে।
সাদিয়া, আরিফ বা আশরাফুলদের ভরসা এখন জরুরি প্রয়োজনে সড়কে বের হওয়া মানুষেরা। সাদিয়া যেমন নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন, তেমনি আরিফ রাজধানীর শাহবাগ বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার আশপাশে ঘোরেন পত্রিকা নিয়ে। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনেরা তাঁদের কাছ থেকে রুটি বা ভাত কিনে খান, চাইলে পত্রিকা কিনে পড়েন। আর আশরাফুলের মতো রিকশাচালকদের জন্য রোগী বা রোগীর স্বজনদের বহন করাই এই কড়াকড়ির সময়ে তুলনামূলক সহজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশ্নের একটা জবাব অন্তত তখন তাঁদের কাছে থাকে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ায় দরজায় খিল এঁটে যারা শঙ্কায় ভুগছেন, তাঁদের থেকে এই পথবাসী মানুষদের জীবন একেবারে আলাদা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় মোস্তাকিন মিয়া (১৭) নামে এক কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের বসতঘর থেকে মোস্তাকিন মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
৩ মিনিট আগেআজ ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) দিবস। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রমের ৩৪ বছর পূর্ণ করে ৩৫ বছরে পদার্পণ করছে। এমন মুহূর্তে এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে খুবিকে নব আবহে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
৬ মিনিট আগেচরমপন্থী জীবন থেকে ফিরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন বাকুল মিয়া (৪৫)। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। তাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার রাত নয়টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের রাউতি উত্তরপাড়া স্কুলের পাশে এ ঘটনা ঘটে। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত...
২৪ মিনিট আগেরাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকার বিটাক মোড়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের শমরিতা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজ
৮ ঘণ্টা আগে