ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার আশঙ্কা সংস্কৃতিকর্মীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ২৩: ১৯
Thumbnail image

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বুধবার শাহবাগে দেশের ৩১টি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রতিরোধী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে। সেখানেই আন্দোলন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারের পতন ও পরবর্তী অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে একটি গোষ্ঠী। বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ফসল অন্য কারও ঘরে যেন না যায়—এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

বিকেলে সাড়ে ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সম্প্রীতি সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় সোয়া ৭টায়। প্রতিবাদী গান-কবিতা দিয়ে পুরো সময় সমাবেশ জমিয়ে রাখেন সংস্কৃতিকর্মীরা। ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন তাঁরা। সমাবেশ থেকে চলমান পরিস্থিতিতে দিকনির্দেশনা মূলক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, ধর্মীয় ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংস করার অপতৎপরতা চলছে। পটপরিবর্তনের নতুন পরিস্থিতির সুযোগে সম্পদ দখল ও চাঁদাবাজির মতো গর্হিত তৎপরতার সঙ্গেও কেউ কেউ যুক্ত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলাসহ এসব অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ’ জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনী সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণের পরেও কেন জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ধর্মীয় স্থাপনা অরক্ষিত? প্রশ্ন উঠেছে, কোনো বিবেচনা ও অধিকারবলে সেনাপ্রধান আন্দোলনকারী সংস্থা ও সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলসহ কতিপয় দল ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনায় বসলেন? এই ঘটনাই কি দেশে নানা সাম্প্রদায়িক হামলার জ্বালানি সরবরাহ করেছে? সামরিক বাহিনী দায়িত্বে থাকার পর শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দেশ থেকে কীভাবে পালাতে পারল? দেশবাসী এ সকল প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। সেনাপ্রধানসহ সামরিক বাহিনীর এ সকল আচরণ ও তৎপরতা দেশবাসীর মনে নানা সন্দেহ ও প্রশ্নের অবতারণা করেছে।’

বিবর্তনের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টুর সভাপতিত্বে আয়োজিত সম্প্রতি সমাবেশে বক্তব্য দেন শহীদ আসাদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান মিলন, পেশাজীবী নেতা ডা. হারুনুর রশিদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, শ্রমিকনেতা আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপন। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সংস্কৃতি চর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশের শুরুতেই স্বৈরাচারী শাসনকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের দেশের জাতীয় বীর আখ্যা দিয়ে তাঁদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

সমাবেশে সম্মিলিত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’, ‘শান্তির গান গেয়ে আমরা নতুন দিনের পথে পা বাড়াব’, ‘দুনিয়ার যত গরিবকে আজ জাগিয়ে দাও’, ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমারই এই বসুন্ধরা’, ‘মশাল জ্বালো উদয় পথের যাত্রী’, ‘লড়াইয়ে আনব নতুন ভোর’ ইত্যাদি সংগীত। আবৃত্তি করেন তিরন্দাজ নাট্যদলের দলপ্রধান দীপক সুমন। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতার পঙ্‌ক্তি ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে পুরোনো শকুন’–এর জায়গায় তিনি বলেন, জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে আরেক নতুন শকুন। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কামরুজ্জামান ভূঁইয়া।

শ্রমিকনেতা আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা আমাদের অতীত ও ভবিষ্যৎ সব কেড়ে নিয়েছিল। তার পিয়ন চার শ কোটি টাকার মালিক। নেতাদের বাসায় বস্তাভরা টাকা পাওয়া গেছে। সব লুটেরাদের বিচার হতে হবে। হাসিনাকে যারা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে দিয়েছে, তাদের বিচার হতে হবে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। কিন্তু গণতন্ত্র আর ভোটের নামে আরেকবার স্বৈরাচারকে চাই না।’

সমাবেশে অংশ নেওয়া প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হলো—বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, রাজু বিতর্ক অঙ্গন, চায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, প্রগতি লেখক সংঘ, গণসংস্কৃতি পরিষদ স্বদেশ চিন্তা সংকল্প, বাংলাদেশ থিয়েটার, তিরন্দাজ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, এই বাংলায়, ঢাকা ড্রামা, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, থিয়েটার ৫২, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ, শহীদ আসাদ পরিষদ, মাদল, বটতলা-এ পারফরমেন্স স্পেস, সমাজ সি ফোরাম, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত