ভাইকে হারিয়ে নৌকার মান রাখলেন সৈয়দ নজরুলের মেয়ে 

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০০
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৪১

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বড় ভাইকে হারিয়ে আবারও সংসদ সদস্য হয়েছেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে তিনি। ওই আসনে লিপির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তাঁরই বড় ভাই ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। 

আজ সোমবার কিশোরগঞ্জের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থী সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপিকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। 

তাঁদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৩ হাজার ছিল ১৮৬। সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৩৪৮ ভোট এবং সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৬২ ভোট। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাঁর বড় ছেলে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। বাবা এবং ছেলে উভয়েই এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পরে সংসদ সদস্য হন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। প্রথমবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে তাঁর আপন বড় ভাইকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। সারা দেশের মানুষের নজর ছিল এই আসন ঘিরে। নির্বাচন ঘিরে ভাই ও বোনের পক্ষের লোকজনের বিষোদ্‌গার ভাবিয়ে তুলেছিল দেশবাসীকে। ভোটের মাঠে বোনকে ঠেকাতে মরিয়া ছিল ভাই। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, কিশোরগঞ্জের সঙ্গে সাফায়াতের বিচ্ছিন্নতা মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হতে দেয়নি। জেলা শহরে দীর্ঘদিন আগে কতিপয় শিক্ষানুরাগীর প্রতিষ্ঠা করা একটি কলেজ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামে পরিবর্তন করে সাফায়াত ওই কলেজের সভাপতি বনে যান। এতে সাধারণের মধ্যে সাফায়াতের দখলি মনোবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে। 

তাঁরা বলছেন, আপন বড় ভাই হিসেবে ছোট বোনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়াটা সাধারণ মানুষ ও কর্মীরা নৈতিকভাবে ভালো চোখে দেখেনি, যেখানে দলীয় প্রধান স্বয়ং লিপিকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তা ছাড়া অতিরিক্ত কাদা-ছোড়াছুড়িতেও লিপি তুলনামূলক শান্ত ছিলেন, যা প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ সাহেবের চারিত্রিক প্রতিফলন। গ্রুপিং রাজনীতির নানান সমীকরণ ছাড়াও কর্মী ও ভোটারেরা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেছেন। 

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সমন্বয় সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এ এম ওবায়েদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ-১ আসনটি মূলত নৌকার ঘাঁটি। ১৯৯৬ সাল থেকে এই আসনে নৌকা সব সময় বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয় পেয়েছে। এবার এত অল্প ভোটে বিজয়ের কারণ হিসেবে নৌকার প্রার্থীর দুর্বলতাগুলো সকলের সামনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যেহেতু জনগণ ৫ বছরের হিসাব এক দিনে মূল্যায়ন করে, তাই জনসম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই।’ 

এদিকে সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির পক্ষে তাঁর ছোট বোন সৈয়দা রাফিয়া নুর রূপা বলেন, ‘আমরা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমাদের বড় ভাই। এবারের নির্বাচনটা অন্যরকম একটা নির্বাচন ছিল আমাদের জন্য। সত্যিকারের একটা কঠিন যুদ্ধ। আমরা সবাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত, তারপরও খুবই খুশি যে আমরা যুদ্ধটা জিতেছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানসিক দিক থেকে খুবই কষ্টের ছিল। কিন্তু ছিল আমাদের আদর্শের লড়াই। আমরা আদর্শের লড়াইটাই করতে চেয়েছি। বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের আদর্শটা ও আমার আব্বা সৈয়দ নজরুলের আদর্শটা ধরে রাখতে চেয়েছি। সেই আদর্শটা ধরে রাখার জন্যই আমাদের এই লড়াইটা করতে হয়েছে। আজকে (সোমবার) অফিশিয়াল রেজাল্ট পেলাম, আজকে বড় ভাইকে (সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম) গিয়ে সালাম করব।’ 

এ বিষয়ে সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের মন্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল নম্বরে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত