‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ০৬
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ১৬
Thumbnail image
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য: বিরোধ সুরাহার পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে মতাদর্শগত বিভাজন কাটিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন। সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে ’৭১ ও ’৯০-এর মতো ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান বৃথা যাবে।

আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য: বিরোধ সুরাহার পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘বহু মতাদর্শের মধ্যকার বিরোধ কীভাবে নিরসন করা যায়, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাষ্ট্রধর্ম, সংবিধানে “বিসমিল্লাহ” থাকবে কি না, এসব ইস্যু বিভক্তি তৈরি করছে। রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছে—কেউ বলছে বেশি সময় নিন, কেউ বলছে দ্রুত নির্বাচন দিন। এই বিরোধের মধ্যে আমরা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান তৈরি করতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়েছিল। আজ যদি কেউ ডানপন্থী বা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেন, সেটি সম্ভব নয়। আমাদের মতভেদ সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট মধ্যবিন্দুতে পৌঁছাতে হবে, যেখান থেকে বাংলাদেশ নতুন অভিযাত্রা শুরু করতে পারবে।’

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই রাষ্ট্র ও সমাজের মঙ্গল চাই—এটাই আমাদের ঐকমত্যের ভিত্তি। কয়েক বছর আগে এমন পরিস্থিতি হবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি। মায়েরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। এখন আমরা কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি, তবে তার মানে এই নয় যে, যা ইচ্ছা তাই বলা যাবে। নীতিনির্ধারকদের সবদিক বিবেচনা করতে হবে।’

চট্টগ্রামে একজন আইনজীবী হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ড. তোফায়েল বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ যদি প্রতিশোধ নিতে মন্দির জ্বালিয়ে দিত, তবে কী হতো? কিন্তু তারা তা করেনি। এটাই জাতির পরিপক্বতা। গণতন্ত্র থাকলে সবাই কথা বলার সুযোগ পাবে এবং সবাই ভালো থাকবে। গণতন্ত্র না থাকলে কিছুই থাকবে না।’

তিনি যোগ করেন, ‘শুধু অর্থনীতি দিয়ে দেশ চলে না। দেশ চালাতে হলে রাজনৈতিক অর্থনীতি দরকার। অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যে একটি মেলবন্ধন থাকা প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।’

২০০৭ সালের উদাহরণ টেনে ড. তোফায়েল বলেন, ‘সেই সময় সবাই সংস্কারের কথা বলছিল, কিন্তু কিছুই করা সম্ভব হয়নি। যারা সংস্কারের পক্ষে কথা বলেছিলেন, তাঁরা দলের বাইরে ছিটকে পড়েছিলেন। সংস্কার করার চেষ্টার কারণে “সংস্কারপন্থী” শব্দটি গালি হয়ে গিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা দেশ চালাতে পারবেন, কিন্তু গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট শিগগিরই প্রকাশিত হবে। তিন মাসের মধ্যে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, নির্বাচিত সরকার কী করবে এবং ধারাবাহিকতা কীভাবে রক্ষা করা যাবে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের আগে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। ৫ আগস্টে দেখলাম, সবাই আছে, শুধু আওয়ামী লীগ নেই। এই বৈচিত্র্যের ঐক্যই বাংলাদেশের পরিচয়।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, জনগণের শক্তির সামনে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য দূর করা যাবে না, যদি না মূল কারণগুলো সমাধান করা হয়।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি একা সামলানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথেষ্ট নয়। সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র শক্তি একত্রিত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বৈরী প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছে। বিগত সরকার ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের কাছে বাংলাদেশকে সমর্পণ করেছে।’

সাইফুল হক আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রয়োজন। বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্কার অপরিহার্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে, তবে সেটি একটি বড় সাফল্য হবে।’

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতি শেখ আব্দুন নূর বলেন, ‘দেশ সঠিক পথে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন সঠিক পথে থাকে, আমরা সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত