মাদকবিরোধী অভিযানে অটোরিকশাচালকের মৃত্যু, পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২০
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পুলিশের অভিযানের সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনদের দাবি, পুলিশের নির্যাতনের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে স্ট্রোকে তিনি মারা যান। গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম ইয়াসিন মিয়া (৪০)। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কয়েক বছর ধরে ফেকামারা গ্রামে বাস করছিলেন এবং অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ইয়াসিন মিয়া সোমবার সন্ধ্যায় লিটন মিয়া নামের এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান। সে সময় পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানের সময় ওই বাড়িতে থাকা ইয়াসিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ধরা পড়ে যান। পরিবারের দাবি, পুলিশ তাঁকে ধরে ঘটনাস্থলেই মারধর করে, এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা গেছেন।

ইয়াসিনের স্ত্রী আমেন খাতুন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমার স্বামী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর নিজেকে সিএনজিচালক পরিচয় দেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে সবার সামনে মারধর শুরু করে। পুলিশের মারধরের কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়।’

লিটন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ওই বাড়িতে ইয়াসিন কেন যেতে পারেন—এমন প্রশ্নে আমেনা খাতুন বলেন, ‘লিটনের বাড়ি ফেকামারা গ্রামে। আমরাও ফেকামারা গ্রামে থাকি। হয়তো আগে থেকে পরিচিত ছিলেন। তবে কেন ওই বাড়িতে গেছে, কারণ জানা নেই।’

কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পাই যে মাদক ব্যবসায়ী লিটনের বাড়িতে মাদকের একটি বড় চালান রয়েছে। অভিযানের সময় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ইয়াসিন অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান এবং পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’

ওসি আরও জানান, এসআই কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে এএসআই নাহিদ, এএসআই মস্তুফা ও কনস্টেবল আশরাফুলও ছিলেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযানের সময় কোনো মাদক উদ্ধার করা যায়নি।’

এদিকে অভিযানের পর থেকে লিটনের বাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ঈসা খাঁন বলেন, ‘হাসপাতালে মৃত অবস্থায় ইয়াসিনকে আনা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের তেমন কোনো মেজর চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পর স্কিনের কালার চেঞ্জ হলে যেমন হয়, তেমন পাওয়া গেছে। এখন এগুলো আঘাতের জন্য হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কিছু, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বলা যাবে।’

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা যাবে।’

ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত