বেঁধে প্লায়ার্স দিয়ে নখ উপড়ে ফেলা হলো কিশোরের, আ.লীগ নেতাসহ আটক ৩ 

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৩৬
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৫৩

গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অপবাদে এক কিশোরকে মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার অফিসের সামনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় প্লায়ার্স দিয়ে ওই কিশোরের হাতের দুই আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়। খবর পেয়ে কিশোরকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে গেলে স্বজনদেরকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। 

গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বরে ওয়ার্ডের লোহাগাছ গ্রামের ফালু মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। 

নির্যাতনের শিকার সাগর (১৭) শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা আসমা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

আটককৃতরা হলেন—শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে এবং শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হক (২৭), একই গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে শরিফ (৩৫) ও নূরুল ইসলাম রাকিব (৩০)। 

নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা আসমা আক্তার বলেন, ‘রাতে আমার ছেলে ইফতার শেষে তারাবির নামাজ আদায় করতে বাড়ির পাশের একটি মসজিদে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন যুবক স্থানীয় এক শিশুকে দিয়ে আমার ছেলে সাগরকে ডেকে বের করে। এরপর ওরা ওখান থেকে ফালু মার্কেটে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের অফিসের সামনে এনে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করে। এরপর প্লায়ার্স দিয়ে আমার ছেলের বাম হাতের দুটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলে। বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে ওরা আমাকে ও আমার বোনকেও মারধর শুরু করে। এ সময় সাগর চুরি করেছে বলে অপবাদ দিয়ে আমার সামনেও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। নির্মম নির্যাতনে আমার ছেলের পায়ের হাড় ভেঙে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সামনে আমার ছেলে ‘‘চুরি করেছে’’ এই মর্মে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বলা হয় এবং একের পর এক অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কিশোরকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।’ 

ফালু মার্কেটের দোকানি আহসান উল্লাহ বলেন, ‘কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন দোকানপাটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আমি শুনেছি কোনো এক স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরায় নির্যাতনের শিকার সাগর জড়িত রয়েছে বলে একটি গুঞ্জন আছে। এর সন্দেহে কয়েকজন মিলে তাকে তুলে আনে। তবে মসজিদ থেকে ডেকে আনা হয়েছে কি না আমি জানি না। আর আশপাশের কোনো দোকানে সম্প্রতি চুরি হয়েছে কি না তাও জানি না।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ বলেন, ‘মারধরের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। ছেলেটাকে অনেক মারধর করা হয়েছে তা দেখেছি। তবে চুরি করছে কি না আমি জানি না।’ 

শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চোর সন্দেহে একজনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যে গ্রেপ্তার হয়েছে মোজাম্মেল হক, তিনি পৌর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। তবে সেটা একান্ত তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এটা দলের কোনো বিষয় নয়।’ 

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমজাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনার পরপরই তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত