কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় ফেলে গেলেন স্বামী, সেই শরীফা হলেন জয়িতা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৪৮
Thumbnail image
মধুপুরে জয়িতা পুরস্কার গ্রহণ করেন শরীফা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় ভেঙেছে সংসার। হয়েছেন বাড়িছাড়া। তারপর টানা ১৫ বছর। সেই যক্ষের ধন আগলে রেখে জীবনযুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন দেখা সেই নারী এবার হয়েছেন জয়িতা। রোকেয়া দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে দেওয়া হয়েছে ক্রেস্ট ও সনদপত্র। সংগ্রামী ওই নারীর নাম মোছা. শরীফা বেগম।

শরীফা বেগমের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের জটাবাড়ী গ্রামে। ২০০৪ সালে পারিবারিকভাবেই ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী এলাকার শামছুল হকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শ্রমজীবী শামছুল হক আর শরীফা মিলে সাজিয়ে তোলেন সংসার। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তাঁদের মা–বাবা হওয়ার অপার্থিব আনন্দ স্পর্শ করে। হঠাৎই এই আনন্দ বিষাদে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। সন্তান প্রসবের পর সেই শঙ্কাই বাস্তবেও রূপ নেয়। শরীফা বেগম কন্যাসন্তান প্রসব করার পর আর কোনো দিন মেয়ে বা মেয়ের মাকে দেখতে আসেননি শামছুল হক।

জয়িতা শরীফা বলেন, ‘আমার স্বামী শামছুল হক ছেলের বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্নপূরণের ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তার হাতে; এটাও তিনি মানতে নারাজ। তিনি আমাকেই এর জন্য দায়ী করতে থাকেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি এমনকি শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। দিন দিন তাঁর অত্যাচার বাড়তে থাকলে আমি বাবার বাড়ি চলে আসি। বাবার বাড়ি রওনা হওয়ার সময় সাফ জানিয়ে দেন, মেয়ে হলে তাঁর বাড়িতে আর ভাত জুটবে না।’

শরীফা বেগম আরও বলেন, ‘অল্প কদিন যেতেই আমার কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। মেয়ে হওয়ার খবর পাওয়ার পর আর কোনো দিন আমাকে বা আমার মেয়েকে দেখতে আসেননি তিনি। শুধু তা–ই নয়, বাড়ি–জমি সব বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন শামছুল হক ও শামছুল হকের মা লাল বানু। সেই থেকেই চলছে জীবনযুদ্ধ।’

এই নারী বলেন, ‘বাবার অভাবের সংসারে বোঝা কমানোর জন্য দুধের সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে মাছ বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। মধুপুর থেকে লবণাক্ত কাটা ইলিশ কিনে এনে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করি। আবার পরের জমিতে কাজ করি। ধান কাটি, রোপা লাগাই, আনারসবাগানে কাজ করি। এভাবেই চলছে সংসার।’

শরীফা বেগম বলেন, ‘টানা ১৫ বছর ধরে হাড়ভাঙা খাটুনির ফলে এখন শরীর অচল হয়ে আসছে। কিন্তু জীবন সংসারের সুখের বদলে অন্ধকার ঘিরে ধরছে। মেয়ে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়ার খরচ, বিয়ে দেওয়ার ভাবনা রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। এমন সময় সরকারিভাবে আমাকে জয়িতা পুরস্কার দিল। ক্রেস্ট দিল, সার্টিফিকেট দিল। এতে আমি খুশি হয়েছি। আরও খুশি হতাম আমার জীবনের নিশ্চয়তা পেলে। আমার অর্থসংকট দূর করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, ‘আমরা গ্রামপর্যায়ে ঘুরে শরীফার জীবনের দুর্বিষহ কাহিনি শুনে তাঁকে প্রেরণা দেওয়ার জন্য জয়িতা নির্বাচন করে সম্মানিত করেছি। শরীফার জীবনের ভয়াবহ সংকটের মাঝেও মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টাকে উৎসাহিত করার জন্যই এই উদ্যোগ।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল মালেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে, তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলে জয়িতার স্বপ্নপূরণ আরও সহজতর হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত