Ajker Patrika

হাসপাতাল নির্মাণ

৬ বছরেও হয়নি কাজ, বাড়তি বিল পরিশোধ

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ 
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিজামকান্দি হাসপাতালের অসমাপ্ত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিজামকান্দি হাসপাতালের অসমাপ্ত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ৬ বছরেও শেষ হয়নি নিজামকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ। দুই বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কাজ। অভিযোগ রয়েছে, কাজের অগ্রগতি ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল তুলে নিয়েছে ৫০ শতাংশ। তদন্তে নেমে এর প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার কেটি ও এমসি নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের নির্মাণকাজ দেওয়া হয়; যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে। এরপর চার দফা মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের মে মাসে। কিন্তু এর মধ্যেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২ দশমিক ১২ একর জমির ওপর হাসপাতালের ছয়টি ভবনের মধ্যে দুটি ভবনের ছাদ এবং ইটের গাঁথুনির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুটি ভবনের আংশিক কাজ হয়েছে। বাকি দুটি ভবনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নালা, সীমানাদেয়াল, রাস্তা, বাগান, ফুটপাত, আসবাব, বহির্বিদ্যুতায়নসহ অন্যান্য কাজে হাতই দেওয়া হয়নি। এখন অর্ধনির্মিত ভবনগুলোয় চলে মাদকসেবীদের আড্ডা।

এখন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অর্ধনির্মিত ভবনগুলোর অবকাঠামো। আর এই আংশিক কাজ করেই অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে, হাসপাতালটিতে যে পরিমাণ টাকা ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়েছে, সে পরিমাণ কাজ হয়নি। আরেকটি বিষয়, কাজটি ২০১৮ সালে শুরু করে এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। এর পেছনে ইঞ্জিনিয়ারদের অদক্ষতার পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ না করে কার্যাদেশ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের বিষয় পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে ঠিকাদারকে বেনিফিট দেওয়া হয়েছে এবং জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’

উপপরিচালক মশিউর জানান, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি দেওয়ার পরও সপ্তম বিল পরিশোধসহ যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে যে অনিয়ম রয়েছে, সে বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এ কাজসংক্রান্ত কিছু অনিয়ম রয়েছে। এ বিষয়েও বিস্তারিত অনুসন্ধান হবে। তারপর এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিজামকান্দি হাসপাতালের অসমাপ্ত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় নিজামকান্দি হাসপাতালের অসমাপ্ত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ নিয়ে কথা হলে গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম হাসানুজ্জামান জানান, বিভিন্ন ধরনের বাধা পার হয়ে কাজটি শুরু হয়। ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারের কাজে গাফিলতি দেখা যায়। ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কাজটি করতে বিলম্ব করে। কাজ শেষ না করলে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হয়। তবে কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হাওয়ায় সেই বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়। এখন নতুন প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগ করে নতুনভাবে কাজটি শেষ করা হবে।

অতিরিক্ত বিল দেওয়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পরিমাপের মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয়েছে, তার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। বাড়তি কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত