Ajker Patrika

ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় র‍্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-শিক্ষার্থী সবাই ভুয়া: রমনা ডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩: ২১
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীতে র‌্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, অন্তত ৩০ জন ব্যক্তি নিয়ে এই ডাকাত চক্র কাজ করে থাকে। অভিযানের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী সেজে ঢুকে তারা ডাকাতি করেন।

আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ফরহাদ বিন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ও ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরোনো লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

রমনা জোনের ডিসি বলেন, রাজধানীর ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের নামের একজন ব্যক্তির ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ভিকারুননিসা স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে তাঁর বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তাঁর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, বুধবার ভোর আনুমানিক ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ডাকাতেরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরীদের বলেন তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজন র‌্যাব লেখা কোটি পরে ছিলেন। সে সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরীরা তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এ সময় ডাকাতেরা তাদের গালাগালি করতে থাকেন এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলেন। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তাপ্রহরী, বাড়ির কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর ডাকাতেরা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলেন। গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন রমনা বিভাগে ডিসি মাসুদ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন রমনা বিভাগে ডিসি মাসুদ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতেরা তখন তাদের আটককে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলেন। তারা জোর করে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেয়।

রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করেন। তখন ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতেরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও মালিকের ভাগনে তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃতরাসহ পলাতক আটজন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে ডিএমপির ধানমন্ডি থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

মামলা রুজুর পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকা থেকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে থাকে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অন্যান্য লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা ও ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত