উত্তপ্ত মধুখালীতে ফের বিজিবি মোতায়েন, দিনভর সহিংসতার ঘটনায় মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ২৫
Thumbnail image

মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে হামলায় দুই সহোদর নির্মাণশ্রমিকদের মৃত্যুর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ফরিদপুর। এরই জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার মধুখালী উপজেলায় দিনভর সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে ওই দিন রাত থেকে চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে জেলার মধুখালী ও রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলায় টহল দিচ্ছে বিজিবি। এ ছাড়া এ ঘটনায় মধুখালী থানায় পুলিশের ওপর হামলার মামলা হয়েছে।

নতুন করে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনায় আগে থেকেই তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল। পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা চলে যায়। নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বর্তমানে মধুখালীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। যেই বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর কৃষ্ণনগর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাশে অবস্থিত কালীমন্দিরের মূর্তিতে আগুন লাগে। আগুন দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়ে কর্মরত সাত নির্মাণশ্রমিককে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে আরশাদুল ও আশরাফুল নামে আপন দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তাঁরা নওপাড়া ইউনিয়নের চৌপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এসপি।

মধুখালীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাএ ঘটনার জের ধরে দুই ভাইকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে গতকাল সকালে মধুখালী উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকার ঈদগাহ মাঠে ‘সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। একপর্যায়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা।

এ সময় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি, বাঁশ ও ইট ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন হিমশিম খায় প্রশাসন। বেলা ২টার দিকে সেখানে ছুটে যান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। কিন্তু তাঁদের কথা না শোনেননি উত্তেজিত জনতা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছররা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশের ছোড়া গুলি ও টিয়ার শেলে কমপক্ষে ১৫ জন বিক্ষোভকারী আহত হন। তাঁদের মধ্যে উপজেলার কামারখালীর উজানদিয়া গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে সোহেল রানার (৪৫) অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের চার সদস্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় মধুখালী থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশের ওপর হামলার মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মঙ্গলবারের সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত