Ajker Patrika

শিক্ষার্থীদের অনশন–অবরোধ চলছেই, এবার গুলশানে অবস্থান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৪৯
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিসহ সাত দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনশন কর্মসূচি পালন করছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনশনে অংশগ্রহণ করছেন ১২ শিক্ষার্থী। অনশনের মধ্যেই দুপুর থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার বিকেল থেকে তিতুমীর কলেজ এলাকায় অবরোধের পর রাতে গুলশান–১–এ অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতে সড়ক বন্ধ করে স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা।

রাত সাড়ে ৯টা পরও তাঁদের গুলশান–১–এ অবস্থান করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানাবেন।

জানতে চাইলে আন্দোলনকারীদের নেতা নায়েক নূর মোহাম্মদ বলেন, দুদিন ধরে আমরা অনশন করছি, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই রাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফের সড়ক অবরোধ করেছে।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা এই কর্মসূচি শুরু করেন। আন্দোলনকারীদের নেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আজকে আমরা তিতুমীরের গেটে থাকব। রাস্তা কিছুক্ষণের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে।’ তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ভোর পর্যন্ত তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। তাতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়, চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ। সেদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান।

দাবিদাওয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবেন, তাঁর এমন আশ্বাসেও পথ ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা।

আজ ভোরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলেও তাঁদের কয়েকজন আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যান। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

পরে জুমার নামাজ শেষে দাবি আদায়ে কলেজের মূল ফটক থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মহাখালী রেলগেট প্রদক্ষিণ করে আবারও কলেজ ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। তখন তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, এখনো ১২ জন অনশনে আছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেওয়া না হবে, ততক্ষণ তাঁরা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

আজ বিকেলে কলেজ ফটকে অনশনকারীদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর সানি। সানি বলেন, ‘শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কাছে আসেননি। তিতুমীর কলেজকে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে।’

এদিকে গুলশান ট্রাফিক বিভাগ বেলা সাড়ে ৩টায় ফেসবুকে পোস্টে বলেছে, গতকালের মতো আজকে কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা তিতুমীর কলেজের সামনের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছেন। ফলে মহাখালী-আমতলী হয়ে গুলশান-১–এর দিকে এবং গুলশান-১ থেকে আমতলীমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

তিতুমীর কলেজের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। আজ সড়কে তুলনামূলক যানবাহন কম হলেও শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন কলেজটির সামনে দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী অনেকের সঙ্গে অবরোধকারীদের থেমে থেমেই বাগ্‌বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে।

এ পরিস্থিতিতে বিকল্প পথে চলাচলের অনুরোধ জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, বনানী-কাকলী থেকে জাহাঙ্গীর গেটগামী চালক ও যাত্রীদের ফ্লাইওভার ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। এ ছাড়া মহাখালী থেকে আমতলী রাইট টার্ন করে যারা গুলশান-১–এর দিকে যাবেন তাঁদের আমতলী হয়ে কাকলী-বনানীর দিকে সোজা গিয়ে কাকলী ক্রসিং অথবা আরও সামনে গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে বনানী-গুলশান-২–এর সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

আন্দোলনকারীরা এর আগে ৭ জানুয়ারি কলেজটির প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন। একই দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি দেন তারা। এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই কমিটি ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক খরচ বহন করা, একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার তৈরিতে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত