বিভিন্ন সময়ে বন্ধুদের আত্মহত্যার কথা বলতেন ফারদিন: ডিবি প্রধান 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭: ০১
Thumbnail image

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছে। তাকে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরশ তার বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিত।’ 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফারদিনের মৃত্যুর তদন্তের বিষয়ে আলোচনা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা ৩৮ দিন মামলাটি তদন্ত করেছি। আমরা আগেও বলেছি তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা, মানসিক অবস্থার কথা আমরা আপনাদের বলেছি। সে যে বিভিন্ন সময়ে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে, কোথাও কোনো জায়গায় তার সঙ্গে কেউ ছিল না। সে একবার রাত ১০-১১টার দিকে অ্যাটেম নিয়েছিল বাবুবাজার ব্রিজে। কিন্তু সেখানে ওই সময়ে অনেক লোকজন ছিল। সে ব্যর্থ হয়। আবার সে জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী গেল। যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে সে ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের এক সাইডে নামে। কিন্তু তখন...আমরা আগেও বলেছিলাম, চনপাড়া বস্তিতে সে কখনো যায় নাই। আমরা ৩৮ দিন তদন্ত শেষে আমরা বলেছি, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। এখানে কেউ তাকে হত্যা করেনি।’ 

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘আজ আমাদের ডিবিতে বুয়েটের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী এসেছে। কীভাবে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন, তা জানতে তারা আমাদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা কথা বলেছে। আমরা তাদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়েছি। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের বুঝিয়েছি। এই এই কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।’ 

আত্মহত্যার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে তিনি আরও বলেন, ‘সে কোনো দিন বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যায়নি। সে বুশরাকে নামিয়ে দিয়ে সে রাত সাড়ে ৯টা থেকে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে। এমনকি সে গত দু বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছে। আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলেছি। সে নভেল পড়ত, সে আলবার্ট ফেমো ও নিটসের বই পড়ত। সেখানে সে পরিবার, জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার এক বান্ধবীকে বলেছিল, ৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার এখতিয়ার হওয়া উচিত না। আবার সে বলেছে, আমি যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে। এবং আরেকটি জায়গায় তার বন্ধুকে বলেছে, দেখবা, কোনো এক শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবা হয় তো বা কেউ....আত্মহত্যার কথা বলেছে। এবং সে শুক্রবারেই কিন্তু আত্মহত্যা করেছে। তার বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিভিন্ন কথা বলা, একা একা ঘোরাঘুরি করা.... ।’ 

সুরতহাল প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ডাক্তারের যে সুরতহাল প্রতিবেদন সেখানেও কিন্তু তার গায়ে কোনো আঘাত নেই, বোতাম ছিল, ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, হাতের ঘড়ি, মোবাইল, টাকা সবকিছুই ছিল। সে যে লাফ দিয়ে পড়েছে, সেটাও আপনারা দেখেছেন। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বলেছি, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। আজকে তার বন্ধুরাও মোটামুটি একমত প্রকাশ করেছে।’ 

পরশ ইন্ট্রোভার্ট ছিল জানিয়েছে ডিবি প্রধান বলেন, ‘সে কারও কাছে কিছুই শেয়ার করত না। তার পরীক্ষার রেজাল্ট যে খারাপ হচ্ছিল সেটিও সে বলেনি। সে আরও একটি কথা বলেছে, ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এটা থাকা ঠিক না। তার পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলত, সে বাসায় থাকতে চাইত না। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের তদন্তকারী দল সিদ্ধান্তে এসেছে যে হত্যার কোনো লক্ষ্মণ নেই। চনপাড়ায় যাওয়ার লক্ষ্মণ নেই, সেখানে কোনো দিনই সে যায়নি।’ 

মামলার বাদী আশ্বস্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে বলে এসেছেন।’ 

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু তথ্যের অসম্পূর্ণতার কথা বলেছেন। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে সব সময় বলা থাকে, ভবিষ্যতে প্রয়োজন দেখা দিলে আমরা আবার তদন্ত করব। 

লেগুনা থেকে দুজন নামার বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে যে লেগুনা চালক তাকে নামিয়েছে, আমরা তাকে ১০-১২ বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু এমন কিছু পাইনি।’ 

বুশরার বিষয়টি কী হবে জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পরে বুশরার সঙ্গে তার এমন কোনো কথা হয়নি। শুধু একবার বুশরা জানতে চেয়েছে, বাসায় ঠিকমতো গেছে কিনা। উত্তরে ফারদিন মিথ্যা বলেছে। সে শুধুমাত্র ইয়েস বলেছে। স্বাভাবিকভাবে বুশরার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তার মুক্তির বিষয়টি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের প্রতিবেদনে জানিয়ে দেব, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। 

ফারদিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও সংবাদ পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত