Ajker Patrika

মৃত যুবলীগ নেতাকে আসামি

‘আব্বুকে কবর থেকে রিমান্ডে নিয়ে যাক’

  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় মৃত এক যুবলীগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
  • গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
  • ২০ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলাটি করেন আন্দোলনে নিহত এক কলেজছাত্রের মা।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
হারুন মোড়ল। ছবি: সংগৃহীত
হারুন মোড়ল। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি ছুড়ে হত্যার ঘটনার করা মামলায় মৃত এক যুবলীগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম হারুন মোড়ল (৫০)। তিনি উপজেলার সিংগারদীঘি গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমান মোড়লের ছেলে ও মাওনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান হারুন।

২০ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মাসুম বিল্লাহ নামের এক কলেজছাত্রের মা। তাঁর নামা মোসা. মোর্শেদা খাতুন। এর আগে গত ৫ আগস্ট উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় নির্বিচারে ছোড়া গুলিতে ওই কলেজছাত্র মারা যান বলে দাবি তাঁর স্বজনদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন মোড়লের কলেজপড়ুয়া ছেলে সিয়াম বলেন, ‘আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাওনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।’ সিয়াম দাবি করেন, ‘তিনি (হারুন মোড়ল) রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবেশী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের জুলুম-নির্যাতন করেননি। সব সময় সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছেন।’ সিয়াম বলেন, ‘হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হাসপাতালে বাবা শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছে, তখনও বাবা হাসপাতালে ভর্তি।’

হারুনের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতুল বলেন, ‘আমার আব্বু জীবিত থাকতেও কারও সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। মামলা যেহেতু হয়েছে, পুলিশ এসে বাবাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাক। কবর থেকে উঠিয়ে রিমান্ডে নিয়ে যাক। কবরে রেখে শত শত মামলা দেওয়া হোক। একজন মৃত ব্যক্তিকে কী করে মামলার আসামি করল। তাঁদের একটুও বুক কেঁপে উঠল না। আব্বু আওয়ামী লীগ করতেন, এটা কী খুবই দোষের? আব্বু তো মারা গেছেন কত আগে, তাহলে কী করে তাঁর নামে মামলা নিল পুলিশ? আমার পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্ট আছে, আবার আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছে।’

এ বিষয়ে মামলার বাদী মোসা. মোর্শেদা খাতুন বলেন, ‘মারা যাওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। আমি তো ১৫ দিন আগে মামলার আবেদন করেছি।’

তিনি মারা গেছেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ এমন প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদা খাতুন বলেন, ‘আমি এত কিছু বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলার এজাহার করেন বাদী। তদন্ত করা পুলিশের কাজ। এ রকম হয়ে থাকলে তদন্ত শেষ তাঁর নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হবে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আফজাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ রকম হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ ক ম মোজ্জামেল হক, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশিদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৩৪ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মাসুম বিল্লাহর মা মোর্শেদা খাতুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত