ছাত্রলীগের হামলা সিসি ক্যামেরায় ধরা, পুলিশের কাছে অধরা

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৮: ২৪
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৮: ৪৩

রাজধানীর দক্ষিণখানের আল মদিনা এজেন্সিতে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হামলার দৃশ্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে সুস্পষ্ট উঠে এসেছে। এ ঘটনায় হামলা ও টাকা পয়সা লুটপাটের অভিযোগ এনে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগী। কিন্তু ঘটনার বারো দিন পার হয়ে গেলেও ছাত্রলীগের ওই নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

দক্ষিণখানের মদিনা রাইস এজেন্সির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখে যায়, গত ১০ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে দোকানে বসে ফোনে কথা বলছিলেন ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম। পাশেই বসা ছিলেন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত মালিকের ছেলে কামরুজ্জামান। ঠিক ৪টা ৩৭ মিনিটে হঠাৎ করে কালো পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক এসে ম্যানেজারকে চড়, থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় ম্যানেজার শফিকুল একটি লাঠি নিয়ে ধাওয়া করলে ওই যুবক পালিয়ে যান। এর এক মিনিট পরে আরও সাত থেকে আটজন যুবক দোকানে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা ম্যানেজারের হাতে থাকা লাঠিটি টানা হিঁচড়া শুরু করেন এবং কয়েকজন তাঁর কলারে ধরে তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। সেই সঙ্গে আরেকজন তাঁকে লাঠিপেটা করতে থাকেন। হামলাকালে তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা, রড ও ক্রিকেট স্ট্যাম্প ছিল।

এ পরিস্থিতিতে কালো পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক একটি স্ট্যাম্প নিয়ে এসে ক্যাশ টেবিলের ভেতরে ঢুকে শফিকুলকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। বাকি ৫ থেকে ৭ জন টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে হামলাকারী কয়েকজন কালো পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকে টেনে নিয়ে যান।

অতর্কিত হামলায় দোকানের ম্যানেজার শফিকুল (৩৬), কর্মী রাজু (২২) ও রাইস এজেন্সির মালিকের ছেলে কামরুজ্জামান (২৪) আহত হন। পরে তাঁদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শফিকুল ও রাজুর মাথা ফেটে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও আঘাত পেয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,  উত্তরখান থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদাত হোসেন সাব্বির (২৬), ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. নয়ন (২৪) ও তাঁদের সহযোগী আরিফ (২৮), প্রান্ত (২৫), লিপু গাজী (২৭), আল আমিন (২৬), ইমুসহ (২৬) আরও অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন  ওই সময় সেখানে ছিলেন। 

হামলাকারীদের মধ্যে হাসিব, আরিফ ও প্রান্ত উত্তরখান হাই স্কুল এলাকায়, লিপু গাজী পাড়ায়, সাব্বির ও নয়ন মাদারবাড়ী এলাকায়, আল আমিন সোনালি মডেল স্কুল এলাকায় এবং ইমু দক্ষিণখানের গাওয়াইর এলাকায় বসবাস করেন। 

উত্তরখান থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদাত হোসেন সাব্বির (২৬) ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. নয়ন (২৪)। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজের স্ক্রিনশটওই রাইস এজেন্সির মালিকের ছেলে মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী ও তাদের সহযোগীরা ৮ থেকে ১০ জন করে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আল মদিনা রাইস এজেন্সি এবং আল মদিনা স্যানিটারির দোকানে হামলা চালায়। সেই সঙ্গে তাঁদের আরও ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী দুই দোকানে সামনে থেকে পাহারা দেয়। 

হামলার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্যানিটারি দোকানে উত্তরখান হাইস্কুল এলাকার আব্দুর রহমান ও তাঁর ছেলে হাসিবুর রহমান পানি তোলার চেকবল কেনার জন্য আসেন। পরে দোকানের কর্মচারী রাকিব চেকবলের দাম ৮০০ টাকা বলে জানায়। এ সময় তাঁরা দক্ষিণখান বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে ফের আমাদের দোকানে আসেন। এ সময় দোকানে থাকা আরেকজন কর্মচারী চেকবলের দাম ৮৫০ টাকা বলায় তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি জিডিও করা হয়েছিল।  পরবর্তীতে বিকেলে তাঁরা ছাত্রলীগের পোলাপান ও তাঁদের সহযোগীদের নিয়ে এসে আবার হামলা চালিয়ে তিনজনকে আহত করেছে। সেই সঙ্গে হামলাকারীরা দোকানের ক্যাশ থেকে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। 

হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দোকানের স্যানিটারি দোকানের মালিক জাকির হোসেন মাতুব্বর বাদী হয়ে পরদিন একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধে প্রবেশ করে গুরুতর হামলা ও ১০ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছে। 

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তরখান থানা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নেতা–কর্মীরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাব্বির ও নয়ন আমাদের ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাদের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের মান সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে তাঁদেরকে  দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটিতে এসেছে। 

হামলার বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মুহাম্মদ মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছি বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। হামলাকারী যেই হোক তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

টাকা লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মামুন বলেন, মামলার বাদী সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেওয়ার কথা। ফুটেজ দেখে পর্যালোচনা এবং তদন্ত করে বিষয়টি বলা যাবে। ফৌজদারি মামলায় ঘটনার সত্যতা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর নিজের। তিনি বলেন, সে দোকানে ১০ কোটি টাকার বেশি মালামাল থাকে, ওই দোকানে ১০ লাখ টাকা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় আজকের পত্রিকাকে বলেন, হামলাকালে কি শুধু ছাত্রলীগের নেতারাই ছিল, আর কেউ ছিল না? তাদের নাম আসল না কেন? 

তিনি বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারছি সাব্বির ও নয়ন ছিল না। সামনে কমিটি দেওয়া হবে, তাই একটি চক্র তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত