Ajker Patrika

দরিদ্র মেধাবীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন চিফ হুইপ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৩৫
দরিদ্র মেধাবীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন চিফ হুইপ

মাদারীপুর শিবচরের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। চলতি বছর মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা যে পরিবারে; সে পরিবারের মেয়ের ভালো ফলাফল অর্জন যেন এক স্বপ্ন। ভালো ফল অর্জন করলেও কলেজে ভর্তির খরচ নিয়ে শঙ্কায় ছিল মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পরিবার। গণমাধ্যমে এই শিক্ষার্থীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে খবর নিয়েছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। এমনকি সুমাইয়ার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেবেন বলেও জানান তিনি।

গতকাল সোমবার বিকেলে সুমাইয়ার বাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়েছেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। ওই শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। কলেজে ভর্তিসহ লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার যে অনিশ্চয়তার শঙ্কা ছিল; তা দূর হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সুমাইয়া ও তার পরিবার।

এ ছাড়া তার পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় চিফ হুইপের ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী সুমাইয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন। ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী পরিবারটিকে সেলাই মেশিন ও মেধা বৃত্তিরও ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের লপ্তিকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক হবি মোল্লা ও তাসলিমা বেগমের ৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সুমাইয়া আক্তার। নদীভাঙনের পর নিজ গ্রাম চরজানাজাত থেকে লপ্তিকান্দি এলাকায় জমি খাজনা করে ঘর তুলে থাকছেন এই পরিবারটি। খেতে কাজ, দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন হবি মোল্লা। সংসারের খরচ মেটাতে ঋণ করে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান কেনেন তিনি। এরপরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সেখানে মেয়ের লেখাপড়া চালানো কষ্টসাধ্য। 

ওই শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, মেয়ের মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। চলতি বছর উপজেলার পাঁচ্চর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে সুমাইয়া। মেয়ের ভালো ফলাফলে দরিদ্র দম্পতির বুক গর্বে ভরে উঠলেও ভালো কলেজে পড়ানো নিয়ে চিন্তিত ছিল এই পরিবারটি। 

ফলাফল প্রকাশের পরে সুমাইয়ার জীবনসংগ্রাম ও কলেজের ভর্তির অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল সকালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে খোঁজ নেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। বিকেলেই সুমাইয়ার বাড়িতে চিফ হুইপের নির্দেশে তাঁর পক্ষ থেকে মিষ্টি নিয়ে যান জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হকসহ প্রতিনিধিদল। এ সময় সুমাইয়ার পরিবার আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা চিফ হুইপের এমন উদ্যোগে সাধুবাদ জানান। 

সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমি সত্যিই অভিভূত। এমন দিন আমার পরিবারে আসবে ভাবতে পারিনি। চিফ হুইপ স্যার আমার লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর ভাই ফোনে কথা বলেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’ 

সুমাইয়ার মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমাগো সংসার চালাইতেই কষ্ট হইতো। অন্যের দেয়া শাড়ি পইরা জীবন কাটতো। মাইয়ারে পড়ানো দুঃস্বপ্ন ছিল। সব অনিশ্চয়তা কাইটা গেছে। মেয়েডা কলেজে পড়ব। আমাগো চিফ হুইপ সাব ব্যবস্থা কইরা দিছে।’ 

পাঁচ্চর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হক বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে নিউজ দেখে চিফ হুইপ আমাকে দুইবার ফোন দিয়ে ওর সব জেনেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওর লেখাপড়া, আবাসনসহ সব ব্যাপারে জেনে এর সুব্যবস্থা করেছেন। এর আগেও তিনি বহু অদম্য দরিদ্র মেধাবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নী বলেন, ‘চিফ হুইপ সুমাইয়ার ভালো ফলাফলে খুশি হয়ে বাড়িতে আমাদের দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়েছেন। কলেজে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন। তা ছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পরিবারটিকে সেলাই মেশিন ও ছাত্রীর জন্য মেধাবৃত্তির ঘোষণা দিয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত