Ajker Patrika

আপন কফি হাউসে নির্যাতনের শিকার সেই কিশোরীর কোনো খোঁজ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ৩৩
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলায় ‘আপন কফি হাউস’-এ নির্যাতনের শিকার সেই কিশোরীকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় কফি হাউসটির দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের এক দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে ১১ এপ্রিল। তবে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে পয়লা বৈশাখ। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিশোরীটি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কফি হাউসের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর এক কর্মচারী তাকে গলাধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আরেকজন লাঠি হাতে বেরিয়ে এসে মেয়েটির পায়ে আঘাত করে। মুহূর্তেই সে ছটফট করতে করতে দুটি প্রাইভেট কারের মাঝে আশ্রয় নেয়, পরে এক মোটরসাইকেল আরোহীর কাছেও সহায়তা চায়।

নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তালতলা, রামপুরা, খিলগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রামপুরা থানার পুলিশও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ভাইরাল ভিডিওটি দেখে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। মামলা করার পর ‘আপন কফি হাউস’-এর ম্যানেজার আল আমিন ও কর্মচারী শুভ সূত্রধরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান তাঁদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১১ এপ্রিল বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরী কফি হাউসে ঢুকলে কর্মচারীরা তার সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে লাঠি দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মামলায় তার গায়ে আঘাত, শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মেয়েটির সন্ধান করতে পারেনি। খিলগাঁও, রামপুরা, তালতলা, মেরাদিয়া, সাহিনুরবাগ ও সিপাহীবাগ এলাকায় খোঁজ করা হলেও তার হদিস মেলেনি। যদিও এলাকাবাসী বলছে, মেয়েটিকে প্রায়ই আশপাশের রেস্টুরেন্ট ও দোকানে দেখা যেত। সে কখনো একা, কখনো কয়েকজন কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে মিশে থাকত। তাদের কাছে খাবার চাইত, টাকা চাইত।

এক রিকশাচালক জানান, ‘ওকে তালতলায় প্রায়ই দেখতাম, কিন্তু তার বাসা কোথায়, তা কেউ জানে না।’

কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে পুলিশ। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফয়েজ ইকবাল বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই মেয়েটিকে খোঁজা হচ্ছে, তবে কেউ তার সন্ধান দিতে পারছে না। সম্ভাব্য সব বস্তি, রেললাইন এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই তাকে ওই এলাকায় দেখেছেন, তবে সে কোথায় থাকে, তা কেউ জানেন না। তার পরও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে মামলার তদন্তে তাকে প্রয়োজন।’

কফি হাউসের কর্মচারীরা যা বলেছেন

১৫ এপ্রিল দুপুরে তালতলার ‘আপন কফি হাউস’-এ গিয়ে দেখা যায়, দোকানটি যথারীতি চালু রয়েছে। কাস্টমারদের আনাগোনা, কর্মচারীদের ব্যস্ততা—সবই স্বাভাবিকভাবে চলছে। কাউন্টারে থাকা শাকিল নামের এক কর্মচারী বলেন, ‘সেদিন মেয়েটি খুব দ্রুত কফিশপে ঢুকে কাস্টমারদের কাছে টাকা ও খাবার চায়। না দিলে থুতু দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন আমরা তাকে বের করে দিতে বাধ্য হই। সে কাস্টমারদের বিরক্ত করছিল। পরে বাইরে গিয়ে গ্লাসে লাথি মারে, ইট তুলে নেয়। তখন এক কর্মচারী তাকে লাঠি দিয়ে হালকা মারে।’

কফি হাউসের আরেক কর্মচারী শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি একটু অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। সে ভেতরে মার খায়নি। বাইরে যা হয়েছে, হঠাৎ করেই ঘটেছে। ভেতরের কেউ ইচ্ছাকৃত কিছু করেনি।’

কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতিতেই এক কিশোরীকে এভাবে লাঠি দিয়ে মারা যায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাঁদের কাছ থেকে।

‘আপন কফি হাউস’-এর মালিক বরিশালের ব্যবসায়ী জিয়া তালুকদার। ২০০৫ সালে খিলগাঁওয়ে এই কফি হাউসের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকায় এর চারটি শাখা রয়েছে—দুটি খিলগাঁওয়ে, একটি করে ধানমন্ডি ও আদাবরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত