Ajker Patrika

হিমাগারে যান্ত্রিক ত্রুটি, পচে যাওয়ার আশঙ্কায় ৩ কোটি টাকার আলু

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ,সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ২০: ২৭
হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি হিমাগারে মজুত করা কৃষকের আলুতে পচন ধরেছে। সেখানে মজুত ৪৫ হাজার বস্তা আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় শতাধিক কৃষক। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ওই হিমাগারে মজুত আছে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার আলু। বর্তমানে আলুগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের রাজদিয়া গ্রামের নাহার কোল্ডস্টোরেজের কম্প্রেসার অচল হয়ে কৃষকের মজুত করা আলুতে পচন দেখা দিয়েছে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক মার্চের প্রথম সপ্তাহে ওই হিমাগারে আলু মজুত শুরু করেন। ৫৫ কেজি করে বস্তায় করে এখন পর্যন্ত হিমাগারে ৪৫ হাজার বস্তা আলু মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ভেতরে মজুতের জন্য কমপক্ষে ১০ হাজার বস্তা আলু হিমাগারের বাইরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই হিমাগারের গ্যাস লাইন অকেজো হয়ে কম্প্রেসার বিকল হয়ে পড়েছে। এতে ভেতরে মজুত করা ৩ কোটি টাকার আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

তাঁরা আরও জানান, কবে এ হিমাগারে যান্ত্রিক ত্রুটির শুরু, তা তাঁদের জানা নেই। তবে ৫-৭ দিন আগে আলুতে পচন ধরার খবর পেয়ে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন হিমাগারে। সপ্তাহখানেক ধরে চেষ্টা চালিয়েও হিমাগার সচল করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের কৃষক আশরাফ হোসেন ঝন্টু জানান, তিনি ওই হিমাগারে দুই হাজার বস্তা আলু মজুতের জন্য অগ্রিম বুকিং করেছেন। ইতিমধ্যে হিমাগারের ভেতর ঢুকিয়েছেন এক হাজার বস্তা আলু। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে হিমাগারের কম্প্রেসার চালু না হওয়ায় আমার সব আলু পচে গেছে। এতে প্রায় ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না।

উপজেলার সন্তোষপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ জানান, তাঁর দুই হাজার বস্তা আলু পচে গেছে। তাঁর মতো আরও অনেক কৃষকের আলু পচে যাচ্ছে। তিনি আলু পচে যাওয়ায় হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। ওই হিমাগারে ৩১ বস্তা লাল আলু বীজ মজুত করেছেন উপজেলার চরনিমতলা গ্রামের কৃষক হাজি আম্বর আলী সরকার। তিনি জানান, তাঁর আলুবীজের পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাহার কোল্ডস্টোরেজের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার ইসরাত হোসেন জানান, লিকুইড গ্যাস লাইনে পানি ঢুকে সেখানে বর্জ্য তৈরি হয়েছে। যার কারণে গ্যাস সঞ্চালন হচ্ছে না। এতে কম্প্রেসার চালু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কম্প্রেসারের ১৫ লাখ টাকার পুরোনো গ্যাস ছেড়ে দিয়েছি। নতুন করে আবার ১০ লাখ টাকার গ্যাস দিয়েছি। তাতেও কোনো কাজে আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমস্যা সমাধানে দুই মাস লাগবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আরেকটা কোল্ডস্টোরেজ আছে, বিকল্প হিসেবে শ্রীনগর উপজেলার আল আমীন কোল্ডস্টোরেজে রাখার জন্য সবাইকে বলেছি।’

হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হিমাগারে মজুত রাখা আলুতে পচন। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। আমি তাদের দ্রুত হিমাগারে যে সমস্যা রয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের জন্য বলেছি। হিমাগারটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। তারপরও আমি তাদের দ্রুত মেরামতের কথা বলে যাচ্ছি, যাতে কৃষকেরা কোনো ধরনের ক্ষতিতে না পড়েন।’

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ৮ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আলু মজুতে এখানে রয়েছে ১০টি হিমাগার। আর রাজদিয়া গ্রামের নাহার কোল্ডস্টোরেজে দুই লাখ বস্তা আলু মজুতের ধারণক্ষমতা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত