Ajker Patrika

মেঘনায় ট্রলারডুবি: মেয়ে বেঁচে ফিরলেও নিখোঁজ মা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২১: ৫৩
মেঘনায় ট্রলারডুবি: মেয়ে বেঁচে ফিরলেও নিখোঁজ মা

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সতাল এলাকার মেয়ে রূপা রানী দে (৩৬)। ২০ বছর আগে বিয়ে হয় ভৈরবের আমলাপাড়া এলাকায়। কিন্তু বৃদ্ধ মা-বাবার কথা ভেবে প্রায় নিয়মিত তাঁদের দেখাশোনা করতে আসতেন রূপা। এরই মাঝে বাবা বিমল দে মারা গেলে একা হয়ে পড়েন মা বিভা রানী দে। মায়ের একাকিত্ব ঘোচাতে একমাত্র সন্তান চৈতীকে নিয়ে রূপা থিতু হন বাপের ভিটায়। মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেতেন শ্বশুরবাড়ি ভৈরবে। 

এরই মধ্যে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চৈতী। মেয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় মা বিভা দে ও মেয়ে চৈতীকে নিয়ে এক সপ্তাহ আগে শ্বশুরবাড়ি যান রূপা। স্ত্রী-সন্তানের বাড়ি আসাকে উপলক্ষ করে ফল ব্যবসায়ী স্বামী ঝন্টু দে তাঁর বোন-ভগ্নিপতিকে দাওয়াত দেন। ভগ্নিপতি বেলন দে এবং অন্য স্বজনেরা দাওয়াতে গেলে আমলাপাড়ার ঝন্টু দের বাড়িতে যেন আনন্দের হাট বসে। কিন্তু তাঁদের এ আনন্দ যে বিষাদে পরিণত হবে, ভাবতে পারেননি কেউই। 

গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাশের মেঘনা নদীর তীরে ঘুরতে যান রূপা, বেলনসহ পরিবারের আট সদস্য। একপর্যায়ে নৌভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু রূপার মা বিভা দে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়ায় তিনি ট্রলারে চড়তে অনীহা জানান। বাকি সাতজন ওঠেন একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে। মেঘনার বুকে নৌকা ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে একটি বালুবাহী বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি নদীতে তলিয়ে যায়। এ সময় চৈতীসহ পরিবারের চারজন অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। বাকি তিনজন ঝন্টুর স্ত্রী রূপা, ভগ্নিপতি বেলন দে ও ভাতিজি আরাধ্য (১২) নিখোঁজ হয়। আজ শনিবার দুপুরে তাঁদের মধ্যে আরাধ্যর মরদেহ খুঁজে পায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি রূপা ও বেলন দের। 

মেঘনার পাড়ে বসে ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আহাজারি করছিলেন বিভা দে। গতকাল বিকেলে জেলা শহরের সতাল এলাকায় বিভা দের বাড়ির সামনে যেতেই শোনা যায় আহাজারি। বিলাপ করে কাঁদছেন বিভা দে। কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারায় চৈতী। তাদের কান্না আর আহাজারিতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া। 

কাঁদতে কাঁদতে বিভা দে বলেন, ‘আমার নাতি চৈতী আমার মেয়ে রূপাকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিল। আমার মেয়েকে খুব সুন্দর লাগছিল। কিন্তু এই সাজই তার জীবনের যে শেষ সাজ হবে, বুঝতে পারলে মেয়েটারে কোনোভাবেই ট্রলারে উঠতে দিতাম না।’ 

চৈতী বলে, ‘মা আমাকে তাঁর কাছে বসতে বলেন। কিন্তু আমি মাকে বলি, আমি ছবি তুলব, তুমি ওখানে বসো। আমি ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। আমি ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যাই। আমি যখন হাবুডুবু খেয়ে পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম, তখন একজন আমার হাত ধরে টেনে আমাকে তীরে নিয়ে যায়। এরপর আর কিছুই জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত