Ajker Patrika

সাবেক কর্মকর্তার বিচক্ষণতায় রক্ষা পেলেন ট্রেনের যাত্রীরা

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ০১
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের সাতখামাইর স্টেশন থেকে পান কিনে রেললাইনের পাশের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছিলেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (৬৭)। পাশে রেললাইনে দাঁড়ানো মহুয়া ট্রেনে হইচই শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন বগিতে আগুন। হাতের পান ফেলে দৌড়ে কাছে যান তিনি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের তাপকে উপেক্ষা করে ট্রেন থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পাওয়ার কারের বগিটি আলাদা করেন। তাঁর এই বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণে ট্রেনের অন্য বগিগুলো আগুন থেকে রক্ষা পায়, আর প্রাণে বেঁচে যান ট্রেনের কয়েক হাজার যাত্রী।

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন সদর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দৌলভপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত লোকোটিভ মাস্টার।

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বাড়ির পাশে সাতখামাইর রেলস্টেশনের পাশের বাজার থেকে পান কিনে রেললাইনের পাশের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ আগুন আগুন বলে ডাক–চিৎকার শুনে দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখি ট্রেনে আগুন জ্বলছে। রেলওয়েতে চাকরি করার কারণে ট্রেনের অনেক কাজকর্ম আমার জানা ছিল।

ফলে দুই বগির মাঝের হুক খুলে পেছনের–সামনের বগিগুলো সরিয়ে নিই। এতে অন্যান্য বগিতে আগুন লাগতে পারেনি। আমি যখন দুটি বগির মাঝখানের হুক খোলার কাজ করি, তখন পাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। গায়ে প্রচণ্ড গরম অনুভব করি। তবুও পিছপা হইনি। আমার অছিলায় হয়তো অনেক মানুষ নিরাপদে বেঁচে ফিরেছে।’

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজমুল আকন্দ রনি বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন কাকার বিচক্ষণতার জন্য আজ হাজারো মানুষ প্রাণে বেঁচে গেল। মহান আল্লাহ তাআলা তো সর্বোচ্চ রক্ষাকারী। আমরা যখন আগুনের তাপে কাছে যেতে পারি না, তখন শাহাবুদ্দিন কাকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উভয় প্রান্তের বগিগুলোর হুক খুলে আলাদা করেন। এমন না হলে মুহূর্তেই অন্যান্য বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ত।’

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘হঠাৎ করে আগুন লাগার ফলে অনেকের মাথায় কাজ করছিল না। কে কী করবে। অনেকে পানি নিয়ে ছুটে আসে। কিন্তু বয়স্ক শাহাবুদ্দিন যে কাজটি করেন, সেটির জন্য সবাই নিরাপদ থাকল।’

জানতে চাইলে ট্রেনের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগুন লাগার ডাক–চিৎকার শুনে ট্রেনের লোকোটিভ মাস্টার ট্রেনটি আস্তে আস্তে থামিয়ে ফেলেন। এরপর যাত্রীরা এদিক–সেদিক লাফালাফি করে নামতে শুরু করেন। ঘটনার পরপরই একজন বয়স্ক মানুষ ট্রেনের জেনারেটর বগি থেকে অন্যান্য বগি আলাদা করার কাজটি করেন। তা না হলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারত।

ট্রেনের পাওয়ার কারসহ ১০টি বগি ছিল। পরে জানতে পারি, তিনি আমাদের রেলওয়ের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত লোকোটিভ মাস্টার ছিলেন। বিষয়টি রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত