ফরিদপুরে রিসোর্টের জন্য কাটা হবে লেক পাড়ের ২৯টি গাছ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ০৯
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ০০: ৩৮

গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে একমাত্র ছায়াশীতল খ্যাত জায়গা ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেকপাড়। এই লেক ঘিরে রয়েছে অর্ধশত বছরের ৩০ থেকে ৩৫টি মেহগনি গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। যার নিচে তাপ প্রবাহে দুপুর, বিকেল ও রাতে প্রশান্তির পরশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সম্প্রতি এই লেক ঘিরে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র বা রিসোর্ট গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট’। এ জন্য লেকের পাড়ে থাকা মেহগনি গাছগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। 

ইতিমধ্যে যার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন জানিয়েছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৯টি গাছ কাটার টেন্ডার হয়েছে। যেকোনো সময় গাছগুলো কাটা হবে। তবে প্রজেক্টের মাধ্যমে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ৭৬২টি গাছ লাগানো হবে।’ 

তীব্র তাপপ্রবাহে যখন হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল সেই মুহূর্তে এই গাছ কাটা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ফরিদপুরবাসীর মধ্যে। তারা গাছগুলো রেখে রিসোর্ট করার দাবি জানিয়েছেন। 

এই লেকের পশ্চিম পাশে রয়েছে মুজিব সড়ক, যার একাংশে রয়েছে টেপাখোলা বাজার। পূর্বপাশের এলাকাটি বিন্দুপাড়া নামে পরিচিত। এই বিন্দুপাড়াসহ অপর দুই পাশে সুসজ্জ্বিতভাবে ঘিরে রয়েছে অর্ধশত বছরের মেহগনি গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। যে গাছগুলো ডালপালা ছড়িয়ে পুরো এলাকাকে ছায়াশীতলে রূপান্তরিত করেছে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রিসোর্ট নির্মাণের জন্য লেক পাড়ে থাকা দীর্ঘদিনের দোকান ও বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। সেগুলো মিস্ত্রি দিয়ে ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। স্থানীয় অনেকে গাছের নিচে বসে লেকের হাওয়া খাচ্ছে, এ যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি। কিন্তু তাদের মলিন মুখ দেখা যায়। অনেকেই রিসোর্ট নিয়ে গল্পগুজব করছেন। কি যেন এক হতাশা কাজ করছে তাদের মাঝে। 

টেপাখোলা লেকপাড়ের গাছ তলায় বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন কয়েকজন মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকাএ সময় কথা হয় জহিরুল ইসলাম নামে এক মুদিদোকানির সঙ্গে। আক্ষেপ করে বলেন, ‘দোকান তো এখানে আর রাখা যাবে না, সরকারি নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। আবার শুনছি, এই গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। গাছগুলো রেখেই তো কাজ করা যায়। গাছগুলো কেটে ফেললে লেকপাড় হাহাকার করবে। এই গাছগুলোই এত দিন আমাদের ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিল।’ 

এ সময় ১০-১২ ব্যক্তির জটলা দেখা যায় গাছের নিচে। লেক নিয়েই গল্প করছেন তারা। আফজাল মন্ডল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে পার্ক করবে। এ জন্য গাছগুলো কেটে ফেলবে শুনছি। আমরা আর এই গাছের নিচে বসতে পারব না।’ 

এদিকে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠছে বিভিন্ন সংগঠনসহ স্থানীয়রা। স্থানীয় সাংবাদিক টেপাখোলার বাসিন্দা এস এম মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘তীব্র গরমে শহরের মানুষ সকালে, দুপুর কিংবা সন্ধ্যার পরে এই গাছের নিচে বিশ্রাম নেন। আমার জানা মতে লেকের উন্নয়নে যে নকশা বা যে বাজেট হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে নিশ্চয় পরিবর্তন হবে। গাছগুলো না কেটে নকশা পরিবর্তন করে পরিবেশ রক্ষা করা হোক।’ 

গাছগুলো রেখে উন্নয়নকাজ করার দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আউলাদ হোসেন বাবর। তিনি বলেন, সারা পৃথিবী এখন উষ্ণতায় ভরে গেছে, দিন দিন গরম বাড়ছে। ফরিদপুরেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে থাকছে। এর মধ্যে গাছ কাটে কীভাবে? যারা গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে তারা মানুষ হতে পারে না। মানুষ যখন প্রকৃতি রক্ষায় গাছ লাগাচ্ছে সেই মুহূর্তে এই গাছ কাটতে দেওয়া যাবে না। শিগগিরই আমরা গাছ কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেব।’ 

ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেকপাড়। ছবি: আজকের পত্রিকাজানা গেছে, টেপাখোলা রিসোর্ট নির্মাণে কয়েকটি ধাপে কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরতার প্রকৌশলীর (এলজিইডি) বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কাদের আজাদ। এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে একজন মন্ত্রী থাকতে পারেন বলে ফরিদপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে কত টাকার কাজ শুরু হয়েছে এ বিষয়ে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এই প্রকৌশলী কর্মকর্তা। 

প্রকৌশলী শাহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে রিসোর্টের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হবে। অনেক কাজ এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সে জন্য কয়েক দিন পর নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়টি জানাতে পারব।’ 

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগে টেপাখোলা রিসোর্টের নামে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প পাশ হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১১ কোটি টাকা এবং চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় অতিবাহিত হলেও কাজটি শুরু হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত