Ajker Patrika

আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে, আসামিদের মায়েদের কষ্ট হবে: আবরার ফাহাদের মা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ২১: ০৮
আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাঁর মা রোকেয়া খাতুন। সেই সঙ্গে তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মা-বাবাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

আজ রোববার আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহালের ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে আবরারের মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে কুষ্টিয়া শহরে নিজ বাসভবনে আজকের পত্রিকার কথা হয়।

বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘যদিও আমি জানি, রায়ের পরে আমার যেমন কষ্ট হচ্ছে, যাঁরা আসামির মা, তাঁদেরও কষ্ট হবে। কারণ, কোনো মা-বাবা তাঁর সন্তানকে সন্ত্রাসী হওয়ার জন্য পাঠাননি। সেই মা-বাবাদের কথা ভেবে আমারও কষ্ট হচ্ছে। তাঁরাও আমার মতো তাঁদের সন্তানকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। হয়তো তখনকার পরিস্থিতি আজ তাঁদের এই পর্যায়ে ঠেলে নিয়ে আসছে। এর জন্য তো আমাদের আসলে কিছু করার নেই।’

আবরারের মা আরও বলেন, ‘আজ যদিও সেই ফ্যাসিবাদী সরকার নেই। আবরারের মৃত্যুর পরে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং বন্ধ হয়ে গেছে। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কেউ মতপ্রকাশ করতে পারতেন না। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও তাঁরা কথা বলতে পারছেন।’

রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘পূর্বের রায় বহাল থাকায় আমরা সবাই সন্তুষ্ট। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘ ছয় বছর পরেও এ দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। কেউ আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। এ জন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখন চাওয়া, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়। এই রায় কার্যকর হলে ভবিষ্যতে এমন কাজ করতে আর কেউ সাহস পাবেন না।’

এ সময় আবরার ফাহাদের মা পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকরের দাবি জানান। একই দাবি আবরার ফাহাদের স্বজনেরাও জানিয়েছেন।

এর আগে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষ হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। ডেথ রেফারেন্স অনুমোদন ও আসামিদের করা আপিল খারিজ করে আজ এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন।

স্বজনদের সঙ্গে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বজনদের সঙ্গে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেরেবাংলা হলের প্রথম তলার সিঁড়িতে আবরারের (২২) প্রাণহীন দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা ৭ অক্টোবর (২০১৯) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ; যাঁদের সবাই বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঘোষিত রায়ে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বিভিন্ন স্তরের ২০ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। রায়ে বাকি ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:–

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত