ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে আটক হয়েছেন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতা সাইদুল করিম (মিন্টু)। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র।
সাইদুল করিমকে আটকের পর ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বহু নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু কেন তিনি আটক হলেন এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। তাঁরা বলছেন, তাঁকে ঢাকায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা কিছু বলবেন না।
এদিকে আজ বুধবার ডিবি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্যই আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারলেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যথাযথ উত্তর না দিতে পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কে এই মিন্টু
সাইদুল করিম মিন্টু হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদাহ ইউনিয়নের ভায়না গ্রামের মৃত রুহুল কুদ্দুস ও আঙ্গুরা বেগমের সন্তান। ওই গ্রামেই ১৯৬৪ সালের ২ জুন তাঁর জন্ম। তবে বর্তমানে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ক্যাসেল ব্রিজ সংলগ্ন ইন্দিরা সড়কের বিলাসবহুল বাড়িতে স্ত্রী আর্মিজা শিরিন আক্তার ও দুই পুত্র এবং এক পুত্রবধূকে নিয়ে বসবাস করেন।
স্ত্রী আর্মিজা শিরিন আক্তার স্থানীয় একটি পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। সাইদুল করিম সেই পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি।
সাইদুল করিম বর্তমানে চেম্বার অব কমার্স এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতিতে উত্থান যেভাবে
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির নেতৃত্বে থাকা সাইদুল করিমের শুরু ছাত্রলীগের হাত ধরে। রাজনীতিতে বেশ দ্রুতই উন্নতি করেছেন তিনি। রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন ছাত্রলীগকেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাইদুল করিম মিন্টুর বাবার আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো ছিল না। ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হলে একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন জালাল–জাহাঙ্গীর। সেই গ্রুপের এক নেতা ছিলেন সাইদুল করিম মিন্টু। ১৯৮৫ সালের দিকে ঝিনাইদহ জেলা কমিটিতে সভাপতি হন জেলার মহেশপুর উপজেলার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদকের পদ পান সাইদুল করিম মিন্টু। এই কমিটির মাধ্যমেই মিন্টু রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
তবে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান গড়তে না পেরে ৮০–এর দশকের গোড়ার দিকে ঢাকায় গিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি শুরু করেন। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক হন।
পরে আবার ঝিনাইদহ ফিরে যান মিন্টু। ১৯৯৩–৯৪ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঝিনাইদহ জেলা শাখার আহ্বায়ক হন। আওয়ামী লীগের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ–যুবলীগ–ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন।
১৯৯৭ সালে সক্রিয় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে, তাঁদের রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বাসন করে জেলা আওয়ামী লীগের হাত শক্তিশালী করেন। ফলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় গড়ে ওঠে তাঁর।
১৯৯৯–২০০০ সালে জেলার সব সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে শ্রমিক লীগ গঠনে উদ্যোগী হন মিন্টু। এ সময় জেলা শ্রমিক লীগকে সক্রিয় করে তোলেন।
২০০৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক হন মিন্টু। ২০০৯ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। সেখান থেকে ভোটার স্থানান্তর করে ২০১০ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন।
পৌর মেয়র হওয়ার পর মিন্টকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনীতি যেমন প্রভাব–প্রতিপত্তি বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে সমান তালে বাড়তে থাকে সম্পত্তি। দ্রুতই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এর মধ্যে সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়ন ও সুরাট ইউনিয়নের সঙ্গে পৌরসভার সীমানা জটিলতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ১১ বছর পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকে। সেই সুবাদে টানা এক যুগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী পৌর মেয়র থেকে যান সাইদুল করিম মিন্টু।
বিনা ভোটের দীর্ঘদিন মেয়র থাকাকালে মিন্টু বিভিন্ন সালিস বৈঠকের বিচার, পৌরসভার নানা প্রকল্প, শহরের হাটের দোকান বেচা–কেনা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু করেন ঠিকাদারি ব্যবসা। জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া শহরের ট–বাজার সংলগ্ন জেলা বিএনপির সাবেক কার্যালয়ের জায়গা কিনে সেখানে গড়ে তোলেন ৬ তলা বিশিষ্ট মার্কেট। সেটি পরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে শোনা যায়। পৌর এলাকার মহিষাকুণ্ডুতে রয়েছে তাঁর বাগানবাড়ি। অবশ্য সেখানে কিছু বসার জায়গা এবং একটি টিনশেড ছোট ঘর ছাড়া কিছু নেই। সেখান প্রায় এক বছর হলো যান না সাইদুল করিম মিন্টু। বর্তমানে ঠিকাদারির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন তিনি।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু ঝিনাইদহ–২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পান। কিন্তু নিজের পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় সাইদুল করিম মিন্টু তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অবশ্য সেই বিরোধ মিটিয়ে নিয়েছেন।
২০১৪ সালের মার্চের দিকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ইজারা সংক্রান্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকার দ্বন্দ্বে খুন হন তৎকালীন জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার বিশ্বাস। ওই রাতে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সকালে চাকলাপাড়া এলাকার ব্রিজের পাশে তাঁর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই হত্যাকাণ্ডে সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সেই সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
২০১৫ সালে ২৫ মার্চ জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মিন্টু। এরপর থেকে সে পদেই রয়ে গেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মিন্টুর বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার চলমান। এর মধ্যে একটি পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন মশক নিধন, গাড়ি মেরামত, রাস্তা পরিষ্কারসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিলের চেকে মূল টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত সংখ্যা বসিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা। জালিয়াতি করে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি মামলাটি করে ঝিনাইদহ দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়। মামলায় সাইদুল করিম মিন্টুসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
এ ছাড়া সদর থানায় ২০১৫ সালের ১ জুলাই ৩০২ ধারায় করা একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন।
গত সংসদ নির্বাচনের আগে কালীগঞ্জের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সাইদুল করিম মিন্টু। আনারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বক্তব্যও দিয়েছেন।
ঝিনাইদহ–৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু নিজেও। তবে শেষ পর্যন্ত ঝিনাইদহ–২ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে নির্বাচনে অনেকটা নীরব ছিলেন।
গত পৌর, জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান ছিল মিন্টুর। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা পরাজিত হন। সেসময় সরাসরি মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন না মিন্টু। তবে বিরোধী পক্ষে অবস্থানের কারণে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। কিছু বিভক্তিও দেখা দেয়।
বিশেষ করে গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বেশ ক্ষিপ্ত হন মিন্টু। সেসময় ঝিনাইদহ–২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন এবং ঝিনাইদহ–৪ আসনের প্রার্থী আনারের বিপক্ষে গোপনে কাজ করেন। ঝিনাইদহ–২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়। তবে নির্বাচনের পর আনারের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন মিন্টু।
এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঝিনাইদহ–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বাস বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সাইদুল করিম মিন্টুর কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা। জেলা আওয়ামী লীগ যাকে সমর্থন করে তিনি তাঁর বিপক্ষে যায়। সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার এবং ঝিনাইদহ–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের বিপক্ষে কাজ করেছেন। এটা নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণেই করে থাকেন। সে সব সময় দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টিতে ব্যস্ত থাকেন, সভা–সমাবেশে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দেন। এতে অনেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ।’
ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে আটক হয়েছেন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতা সাইদুল করিম (মিন্টু)। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র।
সাইদুল করিমকে আটকের পর ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বহু নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু কেন তিনি আটক হলেন এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। তাঁরা বলছেন, তাঁকে ঢাকায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা কিছু বলবেন না।
এদিকে আজ বুধবার ডিবি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্যই আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারলেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যথাযথ উত্তর না দিতে পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কে এই মিন্টু
সাইদুল করিম মিন্টু হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদাহ ইউনিয়নের ভায়না গ্রামের মৃত রুহুল কুদ্দুস ও আঙ্গুরা বেগমের সন্তান। ওই গ্রামেই ১৯৬৪ সালের ২ জুন তাঁর জন্ম। তবে বর্তমানে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ক্যাসেল ব্রিজ সংলগ্ন ইন্দিরা সড়কের বিলাসবহুল বাড়িতে স্ত্রী আর্মিজা শিরিন আক্তার ও দুই পুত্র এবং এক পুত্রবধূকে নিয়ে বসবাস করেন।
স্ত্রী আর্মিজা শিরিন আক্তার স্থানীয় একটি পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। সাইদুল করিম সেই পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি।
সাইদুল করিম বর্তমানে চেম্বার অব কমার্স এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতিতে উত্থান যেভাবে
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির নেতৃত্বে থাকা সাইদুল করিমের শুরু ছাত্রলীগের হাত ধরে। রাজনীতিতে বেশ দ্রুতই উন্নতি করেছেন তিনি। রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন ছাত্রলীগকেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাইদুল করিম মিন্টুর বাবার আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো ছিল না। ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হলে একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন জালাল–জাহাঙ্গীর। সেই গ্রুপের এক নেতা ছিলেন সাইদুল করিম মিন্টু। ১৯৮৫ সালের দিকে ঝিনাইদহ জেলা কমিটিতে সভাপতি হন জেলার মহেশপুর উপজেলার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদকের পদ পান সাইদুল করিম মিন্টু। এই কমিটির মাধ্যমেই মিন্টু রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
তবে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান গড়তে না পেরে ৮০–এর দশকের গোড়ার দিকে ঢাকায় গিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি শুরু করেন। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক হন।
পরে আবার ঝিনাইদহ ফিরে যান মিন্টু। ১৯৯৩–৯৪ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঝিনাইদহ জেলা শাখার আহ্বায়ক হন। আওয়ামী লীগের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ–যুবলীগ–ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন।
১৯৯৭ সালে সক্রিয় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে, তাঁদের রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বাসন করে জেলা আওয়ামী লীগের হাত শক্তিশালী করেন। ফলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় গড়ে ওঠে তাঁর।
১৯৯৯–২০০০ সালে জেলার সব সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে শ্রমিক লীগ গঠনে উদ্যোগী হন মিন্টু। এ সময় জেলা শ্রমিক লীগকে সক্রিয় করে তোলেন।
২০০৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক হন মিন্টু। ২০০৯ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। সেখান থেকে ভোটার স্থানান্তর করে ২০১০ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন।
পৌর মেয়র হওয়ার পর মিন্টকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনীতি যেমন প্রভাব–প্রতিপত্তি বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে সমান তালে বাড়তে থাকে সম্পত্তি। দ্রুতই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনে যান।
এর মধ্যে সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়ন ও সুরাট ইউনিয়নের সঙ্গে পৌরসভার সীমানা জটিলতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ১১ বছর পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকে। সেই সুবাদে টানা এক যুগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী পৌর মেয়র থেকে যান সাইদুল করিম মিন্টু।
বিনা ভোটের দীর্ঘদিন মেয়র থাকাকালে মিন্টু বিভিন্ন সালিস বৈঠকের বিচার, পৌরসভার নানা প্রকল্প, শহরের হাটের দোকান বেচা–কেনা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু করেন ঠিকাদারি ব্যবসা। জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া শহরের ট–বাজার সংলগ্ন জেলা বিএনপির সাবেক কার্যালয়ের জায়গা কিনে সেখানে গড়ে তোলেন ৬ তলা বিশিষ্ট মার্কেট। সেটি পরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে শোনা যায়। পৌর এলাকার মহিষাকুণ্ডুতে রয়েছে তাঁর বাগানবাড়ি। অবশ্য সেখানে কিছু বসার জায়গা এবং একটি টিনশেড ছোট ঘর ছাড়া কিছু নেই। সেখান প্রায় এক বছর হলো যান না সাইদুল করিম মিন্টু। বর্তমানে ঠিকাদারির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন তিনি।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু ঝিনাইদহ–২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পান। কিন্তু নিজের পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় সাইদুল করিম মিন্টু তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অবশ্য সেই বিরোধ মিটিয়ে নিয়েছেন।
২০১৪ সালের মার্চের দিকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ইজারা সংক্রান্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকার দ্বন্দ্বে খুন হন তৎকালীন জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার বিশ্বাস। ওই রাতে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সকালে চাকলাপাড়া এলাকার ব্রিজের পাশে তাঁর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই হত্যাকাণ্ডে সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সেই সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
২০১৫ সালে ২৫ মার্চ জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মিন্টু। এরপর থেকে সে পদেই রয়ে গেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মিন্টুর বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার চলমান। এর মধ্যে একটি পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন মশক নিধন, গাড়ি মেরামত, রাস্তা পরিষ্কারসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিলের চেকে মূল টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত সংখ্যা বসিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা। জালিয়াতি করে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি মামলাটি করে ঝিনাইদহ দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়। মামলায় সাইদুল করিম মিন্টুসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
এ ছাড়া সদর থানায় ২০১৫ সালের ১ জুলাই ৩০২ ধারায় করা একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন।
গত সংসদ নির্বাচনের আগে কালীগঞ্জের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সাইদুল করিম মিন্টু। আনারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বক্তব্যও দিয়েছেন।
ঝিনাইদহ–৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু নিজেও। তবে শেষ পর্যন্ত ঝিনাইদহ–২ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে নির্বাচনে অনেকটা নীরব ছিলেন।
গত পৌর, জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান ছিল মিন্টুর। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা পরাজিত হন। সেসময় সরাসরি মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন না মিন্টু। তবে বিরোধী পক্ষে অবস্থানের কারণে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। কিছু বিভক্তিও দেখা দেয়।
বিশেষ করে গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বেশ ক্ষিপ্ত হন মিন্টু। সেসময় ঝিনাইদহ–২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন এবং ঝিনাইদহ–৪ আসনের প্রার্থী আনারের বিপক্ষে গোপনে কাজ করেন। ঝিনাইদহ–২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়। তবে নির্বাচনের পর আনারের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন মিন্টু।
এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঝিনাইদহ–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বাস বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সাইদুল করিম মিন্টুর কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা। জেলা আওয়ামী লীগ যাকে সমর্থন করে তিনি তাঁর বিপক্ষে যায়। সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার এবং ঝিনাইদহ–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের বিপক্ষে কাজ করেছেন। এটা নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণেই করে থাকেন। সে সব সময় দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টিতে ব্যস্ত থাকেন, সভা–সমাবেশে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দেন। এতে অনেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ।’
সিলেটে ১ কোটি ২১ লাখ টাকার চোরাই পণ্য আটক করেছে বিজিবি। গতকাল বৃহস্পতি ও আজ শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব আটক করা হয়।
১৪ মিনিট আগেচট্টগ্রাম নগরে আত্মীয়ের বাসা থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মনছুরাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডাবলমুরিং থানা-পুলিশ।
১৮ মিনিট আগেকিশোরগঞ্জে সাবেক জেলা প্রশাসক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে ছোট ভাইকে পারিবারিক বাসাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার শহরের গৌরাঙ্গবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেন ছোট ভাই আ. করিম মোল্লা।
৩০ মিনিট আগেমানিকগঞ্জের ঘিওরে কৃষক স্বপন মিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. বিল্লাল মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ শুক্রবার ভোরে রাজধানীর হাজী ক্যাম্প রোড এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৩১ মিনিট আগে