ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান কেটে ফেলার পরামর্শ কৃষি কর্মকর্তার, কৃষকের ক্ষোভ

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ০১

চলতি বোরো মৌসুমে খুলনার ডুমুরিয়ায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। আক্রান্ত ধান থেকে আশপাশের এলাকায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে এই পরামর্শ দেন তিনি। এতে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলায় ২২ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। আর ২ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ এবং ২ হাজার ৩৩৩ হেক্টর জমিতে ব্রি-৬৭ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। তা ছাড়া অন্যান্য জমিতে চাষিরা বিভিন্ন জাতের ব্রি ধান চাষ করেছেন। 

সম্প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত ব্রি-২৮ জাতের ধানেই এই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার মেছাঘোনা, মাগুরখালি, কৈপুকুরিয়া, উলা, রঘুনাথপুর, আটলিয়া, শরাফপুর, সাহস, গুটুদিয়া, শোভনা, রুদাঘরা, খর্ণিয়াসহ বিভিন্ন বিলে কম-বেশি আক্রান্ত হয়েছে। 

খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে বালিয়াখালী ব্রিজের আগে উপজেলার মেছাঘোনা বিলে কৃষক মফিজুর রহমানের এক বিঘা ধান খেত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে এই জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করে থাকি। এবার কয়েক দিন আগে হঠাৎ বর্ষা ও কুয়াশায় আমার ধানে ভাইরাস আক্রমণ করেছে। আমি কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এখন এসে কৃষি অফিস আমাকে ওই ধান কেটে ফেলতে বলছে, যাতে রাস্তা থেকে দেখা না যায়।’ 

মফিজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কৃষি অফিস আমাকে সহযোগিতা না করে উল্টো ধান কেটে ফেলতে বলছে। ব্লাস্ট থেকে ধান খেত রক্ষায় ধান কেটে ফেলা কীভাবে সমাধান হতে পারে।’ 

উপজেলা মাগুরখালি ইউনিয়নের কৈপুকুরিয়া এলাকার শিক্ষক মৃন্ময় কান্তি বালা বলেন, ‘আমাদের কৈপুকুরিয়া বিলের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক চাষিরই কাঁচি নিয়ে বিলে যেতে হবে না। ফসল এমনিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ 

কৃষক নরেশ পোদ্দার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কোথায় কোন বিলে কী পরিমাণ ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে, উপজেলা কৃষি অফিস তা জানেই না। কৃষকের সর্বনাশ হয়ে গেলেও তারা এ বিষয়ে খোঁজ রাখে না। 

ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের নলঘোনা, চাত্রা, খড়িবুনিয়া, হাজিবুনিয়া বিলসহ বিভিন্ন বিলে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। তবে এ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ 

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ‘আমরা মৌসুমের শুরু থেকেই চাষিদের ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তারপরও যারা চাষ করেছে, তাদের কিছু খেত হালকা-বিক্ষিপ্তভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে কীটনাশক ছিটানোয় কিছুটা দমন হয়েছে। আশা করছি, ফলনের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না।’ 

কৃষককে ধান কেটে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধান কেটে ফেলতে আমি কাউকে জোরাজুরি করিনি। আক্রান্ত ধান কেটে ফেললে পাশের খেতের ধান ভালো থাকবে বলে এই পরামর্শ দিয়েছিলাম।’

খুলনা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে কৃষি কর্মকর্তা যদি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান কেটে ফেলতে বলেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। তবে এ ধরনের আপত্তিকর কথা বলা তার সঠিক হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত