Ajker Patrika

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ও নিকলীতে, শীতের দাপটে স্থবির জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ১৫
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ও নিকলীতে, শীতের দাপটে স্থবির জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশে সর্বনিম্ন।

এদিকে হাড়কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শুধু সদর হাসপাতালেই গত এক সপ্তাহে ২ হাজারের বেশি মানুষ শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছে। 

জেলা সদরের হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ এবং দৃষ্টিসীমা ছিল ৯০০ মিটার। সকাল ৯টায় ছিল বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ এবং দৃষ্টিসীমা ৫০০ মিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

সদর উপজেলার দীগড়ি গ্রামের তালহা জুবায়ের বলেন, ‘এই শীতে বাড়ি থেকে বের হওয়া মুশকিল। কম্বলের মধ্যে থেকেই বের হতে মন চাই না।’

শহরের ভ্যানচালক আমান আলী বলেন, ‘কিচ্ছু করার নেই। খাতি গেলি ভ্যান চালাতি হবি। বাড়ি বইসে থাকলি তো কেউ পয়সা দেবে না। তাই কষ্ট হলিও বেরুতি হয়েচে। আমাদের কষ্ট দেখার লোক নেই।’ 

পুরোনো কাপড় বিক্রেতা সেলিম উদ্দীন বলেন, শীতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। মানুষজন গরম কাপড় কিনতে আসছেন। 

শুক্রবার জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া চারপাশ। দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও কমছে না শীতের দাপট। সকাল থেকেই এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ও চায়ের দোকানে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শীতের কারণে কাজ হওয়া মানুষগুলো অলস সময় পার করছে। সড়কেও খুব একটা মানুষের চলাচল নেই। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না; বিশেষ করে তীব্র শীত ও কুয়াশার চাদর ভেদ করে মাঠে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। 

তীব্র শীতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা; বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা হাসপাতালে ভিড় করছেন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে সদর হাসপাতালে শিশুসহ ২ হাজারের বেশি রোগী ঠান্ডার কারণে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের নিউমোনিয়ায় ভর্তি থাকা এক শিশুর মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে কিছুদিন ধরে সর্দি-জ্বরে ভুগছে। আজ আমরা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে নিউমোনিয়া হয়েছে বলে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। কিন্তু হাসপাতালে বেড না থাকায় আপাতত নিচেই আছি।’ 

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না হওয়ার কারণে মেঝেতে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, গত ৭ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ২ হাজার রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে কৃষকদের বোরো ধানের বীজতলা ও আলুখেত রক্ষায় বিশেষভাবে সতর্কতা করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়ার জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। সম্ভব হলে চারা রাতের বেলা ঢেকে দেওয়ার জন্যই আমরা বলছি। এ ছাড়া বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দেওয়া এবং বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. রকিবুল হাসান বলেন, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা এবং কিশোরগঞ্জের নিকলীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। 

তিনি আরও বলেন, দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় একই হওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

নিকলীতে কনকনে বাতাসে খেটে খাওয়া মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা। 

এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে মধ্যবয়স্করা ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন ফার্মেসিতে। তবে সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলছেন, জেলায় ঠান্ডা রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫০ জন ভর্তি আছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের সূত্র জানায়, আজ সকালে হাওর উপজেলা নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নিকলীতে, ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের বাসিন্দা রিকশাচালক হান্নান বলেন, ‘গত রাত থেকে কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাট তেমন দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে সূর্যের দেখা নেই সারা দিন। ঠান্ডা বাতাসের কারণে বেশি শীত লাগছে। লোকজনের তেমন দেখা নেই। ভাড়া কম হচ্ছে।’ 

ইটনা উপজেলার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে বোরো ধান লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু শীতের কারণে শ্রমিক পাচ্ছি না। ঠান্ডা পানিতে দীর্ঘ সময় আমি নিজেও কাজ করতে পারছি না।’

নিকলী উপজেলায় নির্মিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার ফারুক জানান, আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তাপমাত্রা এমনই থাকবে। রোববার থেকে তাপমাত্রা বাড়বে। 

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, হাওরাঞ্চলে বোরো ধান রোপণ শেষ। তীব্র শীতে ফসল বাড়ে কম। তবে চিন্তার খুব একটা কারণ নেই। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র রয়েছে। কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন শীতার্ত মানুষের পাশে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত