Ajker Patrika

স্কেল পরিচালনায় আড়াই কোটি ব্যয়, সুফল নেই

আজিজুল হক, বেনাপোল (যশোর) 
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ২১
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সুরক্ষায় বসানো এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন। সম্প্রতি বেনাপোল পৌর গেট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সুরক্ষায় বসানো এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন। সম্প্রতি বেনাপোল পৌর গেট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে বসানো হয়েছে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন। এই স্কেল পরিচালনায় বছরে সরকারের ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কোনো সুফল মিলছে না। ঠেকানো যাচ্ছে না অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি।

স্কেল পরিচালনায় নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন বলছে, সড়কে পণ্য পরিবহনকারী সংগঠনগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় তারা সেবা দিতে পারছে না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাশের ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়ক বাদ রেখে শুধু বেনাপোল সড়কে স্কেল চালুর ফলে এ পথে বাণিজ্য কমার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সড়ক উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু সড়কের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের যান চলাচলের কারণে অল্প দিনেই সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সংস্কারে ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা।

এদিকে সড়কপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সিংহভাগ হয় বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে। এই বন্দরে চলাচলকারী ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় স্কেল স্থাপন করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে এটি স্থাপন করা হয়। পরে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট স্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে দায়িত্ব দেয় সরকার।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ৪২ জন স্কেল পরিচালনায় কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছেন ৭ জন আনসার সদস্য। এই মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে স্কেলে অতিরিক্ত পণ্য শনাক্ত হলেও জরিমানা আদায় বা বেশি পণ্য বোঝাই বন্ধে কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে স্কেল পরিচালনায় সরকারের বিপুল অর্থ যেমন বিফলে যাচ্ছে, তেমনি অতিরিক্ত পণ্য বহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার নুরুজ্জামান জানান, বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো সহযোগিতা না করায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ ও জরিমানা আদায় করা যাচ্ছে না।

যশোরের নাভারন হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রোকনুজ্জামান বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকে ওজন রসিদ না থাকায় অতিরিক্ত পণ্য বহন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাশের নওয়াপাড়া ও ভোমরা বন্দর সড়ক বাদ রেখে শুধু বেনাপোলে স্কেল চালু হলে এ পথ ব্যবহার করে ব্যবসা কমে আসবে। পাশের বন্দরের সড়কগুলোতে স্কেল চালু হলে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি ব্যবহার করবেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘আশপাশের বন্দর বাদ দিয়ে শুধু বেনাপোল সড়কে স্কেল চালু ব্যবসায়ীরা কখনো মানবেন না। বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানার বিধান প্রভাব ফেলবে বাজারে। এটি সহনশীল পর্যায়ে থাকলে ব্যবসায়ীরা মেনে নেবেন।’

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, বেনাপোল বন্দরের পাশে ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর রয়েছে। তবে শুধু বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে স্কেল চালু হলে সেটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈষম্য হবে। ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়কে স্কেল চালু হলে বেনাপোল সড়কের স্কেল ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন ব্যবসায়ীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত