মৃত্যুর আগে শিশুসন্তানকে দেখার ইচ্ছাও পূরণ হয়নি ইয়াসিনের

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ২১: ৪৫
Thumbnail image

ইয়াসিন আরাফাত ইফতার করতে বাড়ি ফিরবেন বলে স্ত্রী রুমী আক্তার ফারজানাকে জানিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনে এই কথা হওয়ার কিছুক্ষণ পর এক প্রতিবেশী এসে জানান, পাশের বাড়ির গ্যাসের আগুনে আরাফাত দগ্ধ হয়েছেন। এর পর থেকে প্রায় সারা রাত এক মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে শাশুড়ির হাত ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন ফারজানা।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর জানতে পারেন, দগ্ধ ইয়াসিনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার পর শাশুড়ির সঙ্গে দগ্ধ স্বামীর কাছে পৌঁছাতে পারেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল ইয়াসিনের। শিশুসন্তান হুসাইনকে দেখার জন্য বায়না ধরেছিল। কিন্তু নার্সরা শিশুকে বাবার কাছে নিতে দেননি। ফারজানা কান্নাকাটি করছিলেন বলে তাঁকেও বের করে দেওয়া হয়।

স্বামীর শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ করতে না পারা দুঃখ ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিলাপ করছেন ফারজানা।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ ইয়াসিন আরাফাত ছয় দিন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থেকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান। গভীর রাতে মা আয়শা খাতুন ও বড় ভাই আব্দুল কাদেরের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াসিন আরাফাত কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উদিবাড়ি গ্রামের আল-আমিনের ছেলে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মা আয়শা খাতুন দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরের একটি ঝুট কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দেড় বছর আগে ছোট ছেলে ইয়াসিনের বিয়ে দেন। ইয়াসিন এক মাস বয়সী পুত্রসন্তান হুসাইন ও স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন।

আজ বুধবার তাঁদের গ্রামের বাড়িতে গেলে মা আয়শা খাতুন জানান, বড় ছেলের পর দেড় বছর আগে ছোট ছেলে ইয়াসিনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ও নাতিদের নিয়ে থাকতেন। ‘এখন কী নিয়ে থাকবেন’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আজ সকালে ইয়াসিনের মৃতদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি তাঁর নানাবাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসার গোপগ্রাম আনা হয়। জানাজা হয় স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে। পরে তাঁকে গোপগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গোপগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আলমি সরদার জানান, পরিবারটি খুবই নিরীহ প্রকৃতি। তাঁরা শুধু উৎসব-পার্বণে বাড়ি আসতেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করতেন।

১৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকার শফিক খানের টিনশেড কলোনির সামনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩২ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের মধ্যে ইয়াসিনসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত