চোর সন্দেহে পিটিয়ে যুবকের হাত–পায়ের আঙুল ভেঙে দিয়েছে গ্রামবাসী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩: ০৯

চোর সন্দেহে কুষ্টিয়ার খোকসায় এক যুবককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত–পায়ের আঙুল ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী। সাত ঘণ্টা পর আজ মঙ্গলবার আহত ওই যুবককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে খোকসা ও পাংশা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ সকালে তাকে খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়া কালীবাড়ির মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইফাত জাহান তনুজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহত যুবকের হাত-পায়ের অধিকাংশ আঙুল ফাটা। রক্ত ঝড় ছিল। এক্স করতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি রাখা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী যুবকের নাম সুমন (৩০)। তিনি পাবনা জেলার বেড়া থানার সিংহাসন গ্রামের রেজাউল প্রামানিকের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার গভীর রাতে রাজবাড়ী জেলার পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ মণ্ডলের মুদি ও রাসায়নিক সারের দোকানে চুরির চেষ্টাকালে গ্রামবাসী ধাওয়া করে। একপর্যায়ে খোকসা ও পাংশার সীমান্তবর্তী এলাকায় চোর চক্রের সদস্য সুমনকে গ্রামবাসী আটক করে। পরে গ্রামবাসী তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আটক যুবক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে শিমুলিয়া কালীবাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যায় গ্রামবাসী।

মঙ্গলবার সকালে একজন গ্রাম পুলিশ আহত অবস্থায় যুবককে উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহত যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। 

তবে ভুক্তভোগী সুমনের দাবি, সে পাংশা উপজেলার কালীতলা গ্রামে বেড়াতে আসছিলেন। বিকেলে ঘুরতে বেরিয়ে গ্রামের পথ হারিয়ে ফেলেন। রাতে পথ চেনার জন্য ওই দোকানের কড়া নাড়লে তাকে চোর সন্দেহে তাড়া করে গ্রামবাসী।’ 

সুমন বলেন, ‘আটকের পর লোহার বড় ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত–পায়ের ২০টি আঙুল ভেঙে দিয়েছে। সারা রাত তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হামলাকারীদের কাছে সে অনেক বার বাঁচার আকুতি করেছে, কিন্তু কেউ তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। পরে তাকে খোলা আকাশের নিচে একটি মাঠে ফেলে রাখা হয়।’ 

মুদি দোকানি ফরিদ মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাংশার গাঁড়াল গ্রামে তার বাড়িতে গেলে তিনি বাড়ি ছিলেন না। তার মা আম্বিয়া জানান, তার ছেলে চোরদের দেখে চিৎকার দিলে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে এক চোরকে আটক করে। আর একজন স্যান্ডেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী চোরকে মেরে ছেড়ে দিয়েছে। 

পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নিজাম আলী মণ্ডল জানান, রাতে গ্রামের লোক চোর ধরে ছিল শুনেছেন। এর বেশি আর কিছু জানেন না। 

খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজ জানান, রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে চোর ধরার ও মারার খবর পান। চোরকে প্রথমে রাজবাড়ি পাংশার লোকজন ধরে। পরে গরু চুরির সন্দেহে শিমুলিয়া গ্রামের লোকেরা নিজেদের কাছে নেয়। দুই পক্ষের নির্যাতনে চোর জ্ঞান হারিয়ে ফেললে গ্রামের লোকজন তাকে ফেলে চলে যায়। 

তিনি আর ভয়ে সেখানে যাননি। সকালে থানা-পুলিশের নির্দেশে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ওই চোরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তিনি এর বেশি খোঁজ করেননি। 

শিমুলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ শ্যামল কুমার দাস জানান, চোর সন্দেহে যুবকে আটক করে পাংশার লোক। রাতে তাদের কাছ থেকে খোকসার লোকেরা নিয়ে নেয়। তারাই তাকে মারপিট করে কালীবাড়ি মাঠে ফেলে যায়। তিনি এই খবর শুনে থানা-পুলিশের একজন দারোগার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার নির্দেশে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 

শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিট পুলিশের দায়িত্বে এসআই মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গ্রাম পুলিশ একজনকে উদ্ধার করেছে তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। 

খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননুর জায়েদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউতো দায় স্বীকার করতে চায় না।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত