Ajker Patrika

বই পড়ে পুরস্কার পেল খুলনার ৩১২৬ শিক্ষার্থী 

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ১৯: ৪৬
বই পড়ে পুরস্কার পেল খুলনার ৩১২৬ শিক্ষার্থী 

খুলনা মহানগরের স্কুল পর্যায়ের ৩ হাজার ১২৬ জন শিক্ষার্থীকে বই পড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরণ করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আজ শুক্রবার খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে এই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মহানগরীর ৪৯টি স্কুলের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ ছাত্রছাত্রী বই পড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে; তাদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য আজ খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এই পুরস্কার বিতরণ উৎসবে ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে। এ ছাড়া ৮৯০ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ করেন। 

দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. আবদুন নূর তুষার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অলোক কুমার মৈত্র, গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। 

এ ছাড়া বিভিন্ন পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার ফারহানা নাজ, খুলনা পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট মোল্যা ফরিদ আহম্মেদ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবির ববি। 

আজ সকালে সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সম্মানিত অতিথিদের অভিনন্দন জানান এবং এই বিশাল আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পনসরের জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। 

খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সকলকে বই পড়তে হবে। বই আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। একটা জিনিসকে নানা আঙ্গিকে দেখার জন্য বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে।’

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, ‘পাঠ্য বইয়ের বাইরে সাহিত্যের বইগুলো সব সময় জীবনের জন্য প্রয়োজন। আমরা সবাই এই জীবন পাঠশালার ছাত্রছাত্রী মাত্র। বিশ্ব নাগরিক হওয়ার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।’

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা কি জানো, তোমাদের মতো লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত।’ একটা ভালো কাজের সঙ্গে সব মানুষকে যুক্ত থাকতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

খুলনা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়গ্রামীণফোনের খুলনা রিজিওনাল হেড বুশরা মেহরিন শুভেচ্ছা বক্তব্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, একজন পাঠক এক হাজার বছর জীবন অতিবাহিত করে, যারা বই পড়ে না, তারা একটি জীবন অতিবাহিত করে। তাই বই অবশ্যই পড়তে হবে। তিনি গ্রামীণফোনের অ্যাপ থেকে ডাউনলোড করে বই পড়তে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করেন। 

পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরা পাঠক পুরস্কার শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার ৪৯টি স্কুলের ৩ হাজার ১২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

এর মধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ৫৭৯ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৮০৩ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১ হাজার ৬৩০ জন এবং সেরা পাঠক পুরস্কার পেয়েছে ১১৪ জন। বিজয়ী ২ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ৮৯০ জন শিক্ষার্থীর পুরস্কার সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকের হাতে হস্তান্তর করা হয়। 

কর্মসূচি নিয়মানুযায়ী সেরা পাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশেষ পুরস্কার হিসেবে ১০টি মূল্যবান বইয়ের একটি করে সেট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পনসর করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছর ধরে সারা দেশে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানা রকম উৎকর্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হচ্ছে ‘বই পড়া’। বর্তমানে সারা দেশে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বই পড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুরস্কারের ব্যবস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত