শৈলকুপায় গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা ৬ গ্রামের মানুষের

শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। কিন্তু আর পারছি না। কিছুদিন আগে চুরি হয়ে গেছে তিনটি গরু, এখন গোয়াল ফাঁকা।’ এমনটি বলছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১৫ নম্বর ফুলহরি ইউনিয়নের বেড়বাড়ি গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মণ্ডল।

পর পর তিনটি গরু চুরি হয়ে যাওয়ার পর চুরি ঠেকাতে এখন রাত জেগে পাহারা দেন সিদ্দিক মণ্ডল। গরু চুরি ঠেকাতে তাঁর মতো পাহারা দিচ্ছে ৬ গ্রামের মানুষ। তাঁর অভিযোগ, থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো ফল মিলছে না। তবে পুলিশ বলছে, আর যাতে চুরি না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে তাদের।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গত দেড় বছরে শতাধিক গরু চুরি হয়েছে শৈলকুপা উপজেলার বেড়বাড়ি, চাঁদপুর, দুধসর, আসাননগর, কুলচারা, গাবলা গ্রামের কৃষকের। প্রায় প্রতি রাতেই কোনো না কোনো কৃষকের গরু চুরি হয়। উপায়ান্তর না পেয়ে গ্রামের মানুষ গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দেওয়া শুরু করে।

এলাকাবাসী জানায়, ১০-১২ জনের দল লাঠি ও টর্চ লাইট হাতে নিয়ে সারা রাত পাহারা দেয়। তবু গরু চুরি থামানো যাচ্ছে না। কয়েক দিন আগে দুধসর গ্রামের গোলাম সরোয়ার ও রাকিবুলের চারটি গরু চুরি করার সময় মালিকের উপস্থিতি টের পেয়ে গরু ফেলে পালিয়ে যায় চোরেরা।

উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামের রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘গরুগুলো কোরবানির ঈদের সময় বিক্রি করে তা দিয়ে সারা বছরের সংসারের খরচ চালানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে পাঁচটি গরুর মধ্যে তিনটি চুরি হয়ে যায়। চোর আমার সব শেষ করে দিয়েছে। তাই এখন রাত জেগে পাহারা দেই।’

দুধসর গ্রামের রানা বিশ্বাসের দুটি গরু চুরি হয়েছে। তাঁরও শেষ সম্বল ছিল ওই দুটি গরু। তিনি বলেন, ‘আমার মতো এলাকার অনেকেরই গরু চুরি হয়েছে।’

উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘অন্যের জমিতে কাজ করি আর বাড়িতে গরু লালনপালন করি। আমারও তিনটি গরু চুরি হয়ে গেছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছিলাম। অনেক কষ্টে কিস্তি দিতাম। আশা ছিল বছর শেষে কিছু টাকা জমাতে পারব। কিন্তু এখন তো সবই শেষ হয়ে গেছে। আমার তো আর কিছুই থাকল না। আর যাতে চুরি না হয়, তাই পাহারা দিচ্ছি।’

উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে গরু চুরি হচ্ছে। তাই গরু চুরি আতঙ্কে এলাকার লোকজন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, আর যাতে কোনো কৃষকের গরু চুরি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঠাকুর দাস মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই মাস আগে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তখন দুটি মামলাও নিয়েছি। সন্দেহজনক ১০-১২ জনকে থানায় ধরে আনা হয়েছিল। আমাদের পুলিশের তত্ত্বাবধানে গ্রামের লোকজন নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুদিন হলো কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। যাতে আর কোনো গরু চুরির ঘটনা না ঘটে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত