চুয়াডাঙ্গায় দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিসহ তিনজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় দুর্ঘটনার শিকার চারজনকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন ও আহত অপর দুজনকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। পরে বেলা তিনটা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার জাফরপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহতেরা হলেন-চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নুরনগর কলোনিপাড়ার রিকাত আলীর ছেলে মিঠু হোসেন (৩০), একই এলাকার ফার্মপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে টুনু হোসেন ওরফে আনন্দ (২২) ও সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার শ্রী মনোরঞ্জন হালদারের ছেলে ও এভারেস্ট ফার্মা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি শ্রী মুক্তা হালদার (২৮)। আহত রনি হোসেন (৩৫) রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার মোনহরপুর গ্রামের আলাউদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে ও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপের বিক্রয় প্রতিনিধি। 
 
জানা যায়, দুপুর একটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কলোনিপাড়া থেকে একই মোটরসাইকেলে মিঠু হোসেন ও টুনু হোসেন ওরফে আনন্দ সরোজগঞ্জ বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। অপরদিকে অন্য একটি মোটরসাইকেলে এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি শ্রী মুক্তা হালদার ও রনি হোসেন কাজ শেষে চুয়াডাঙ্গার শহরের দিকে ফিরছিলেন। পথে জাফরপুর যুব উন্নয় অধিদপ্তরের সামনে পৌঁছালে একটি ট্রাককে ওভারটেক করার পরেই দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় মোটরসাইকেলের চালকসহ চারজন গুরুতর জখম হয়। এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় দুর্ঘটনার শিকার চারজনকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মিঠু হোসেন ও টুনু হোসেন ওরফে আনন্দকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর জখম শ্রী মুক্তা হালদার ও রনি হোসেনকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দুজনকেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। তবে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার আগেই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্রী মুক্তা হালদারের মৃত্যু হয়। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি রনি হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো ভিজিট শেষে মোটরসাইকেলে করে মুক্তা হালদার ও আমি সরোজগঞ্জের দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের দিকে ফিরছিলাম। মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে আসছিলেন মুক্তা হালদার। পথের মধ্যে যুব উন্নয়নের সামনে পৌঁছালে একটি ট্রাককে ওভারটেক করে সামনে থেকে অপর একটি মোটরসাইকেল আমাদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়।’ 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সড়ক দুর্ঘটনার শিকার চারজনকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় জরুরি বিভাগে নেয়। তবে চারজনের মধ্যে জরুরি বিভাগে দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও গুরুতর জখম দুজনকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এর আগে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা তিনটা ১৫ মিনিটের দিকে তাঁরও মৃত্যু হয়।’ 

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সদর থানাধীন জাফরপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয় মোটরসাইকেলের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মিঠু হোসেন ও টুনু হোসেন ওরফে আনন্দ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত অবস্থায় সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার শ্রী মুক্তা হালদার নামের অপর এক ব্যক্তির সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’