যশোরে স্বাধীনতা চত্বরে তোলা দোকান সরিয়ে নিলেন সেই বিএনপি নেতারা

যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া স্বাধীনতা চত্বরের জায়গায় সম্প্রতি চারজন বিএনপির নেতা-কর্মী দোকানঘর তোলেন। দৈনিক আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভের মুখে আজ সোমবার দোকানঘরগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 

এর আগে গত ৫ আগস্ট চিত্রা নদীর পাড়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি করা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বিশৃঙ্খলাকারীরা। এর পরদিনই এ জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়। 

বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উদ্দীন, তাঁর ফুফাতো ভাই বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাউদ হোসেন, বাঘারপাড়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম ও বিএনপির কর্মী মহাসিন আলী ওই জায়গা দখলে নিয়ে এসব দোকানঘর নির্মাণ করেন।

বিএনপি নেতা সদর উদ্দীন বলেন, ‘গতকাল রোববার আমি ইউএনও ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাকে দোকানঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে বলেন। এ জন্য আজ সোমবার সকালে আমি দোকানঘর সরিয়ে নিয়েছি। ইটের ভিতও (ইটের দোকানও) ভেঙে সরিয়ে নেব।’

আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে দোকান ভাঙার কাজ। চার-পাঁচজন শ্রমিক টিনের ছাউনি ও বেড়ার দোকানঘর ভাঙেন। প্রথমে তাঁরা দোকানের টিনের ছাউনি খোলেন। এরপর তাঁরা তার দিয়ে দেওয়া বাঁধন কেটে টিনের বেড়া এবং বেড়ায় ব্যবহৃত বাঁশ সরান। 

পরে তাঁরা কংক্রিটের খুঁটিগুলো তোলেন। এসব টিন, বাঁশ ও কংক্রিটের খুঁটি পাশের চাড়াভিটা-নারিকেলবাড়িয়া সড়কে রাখা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ইট দিয়ে তৈরি করা দোকানের ভিত্তি তখনো সরানো হয়নি। সেখানে তিনটি কংক্রিটের খুঁটিও রয়েছে।  

সদর উদ্দীন আরও বলেন, ‘ওই জায়গার পাঁচ শতক জমি আমি সরকারের কাছ থেকে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছিলাম। সেখানে একতলা একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যবসা করেছি। কিন্তু ২০০৬ সালে সরকার ওই জমি নিয়ে নেয়। আমার করা ভবনটি ভেঙে ফেলে। এরপর সরকার সেই জায়গায় প্রথমে স্বাধীনতা চত্বর এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। আমি ১৮ বছর ধরে বেকার হয়ে আছি। ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়। কেউ যাতে দখল না করতে পারে, এ জন্য আমি সড়ক ঘেঁষে একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছি। এতে আমার ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।’

বিএনপি নেতা দাউদ হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতা চত্বরের জায়গায় আমি ঘর তুলিনি। স্বাধীনতা চত্বরের বাইরে নদীর সঙ্গে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। আমি সেখানে কয়েকটি কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে রেখেছিলাম। এই নিয়ে কথা ওঠায় আমি সেখান থেকে পিলারগুলো সরিয়ে নিয়েছি।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে যশোরের বাঘারপাড়ায় উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন লোকজন। একপর্যায়ে মিছিল বের হয়। মিছিলে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। এ সময় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে হামলা চালিয়ে তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। 

এর পরদিন বিএনপির চার কর্মী ওই জায়গা দখলে নেন। তাঁরা বৈদ্যুতিক কাটার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের রড কেটে ফেলেন। এরপর দোকানঘর তোলা শুরু করেন।

উপজেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ২০০৯ সালে উপজেলা প্রশাসন চিত্রা নদীর পাড়ে মাটি ভরাট করে স্বাধীনতা চত্বর তৈরি করে। তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে স্বাধীনতা চত্বরে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করতেন। সাধারণ মানুষও সেখানে শ্রদ্ধা জানাতেন। 

২০১৮ সালে উপজেলা প্রশাসন স্বাধীনতা চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সেখানে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ছিল। ওই স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়া এবং সেখানে দোকান নির্মাণ করায় তাঁরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলায় তাঁরা হতবাক। স্বাধীনতা চত্বর থেকে শুধু দোকান ভেঙে সরিয়ে নেওয়ায় তাঁরা আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) খুশি নন। তাঁদের দাবি, যাঁরা এসব করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ আগের মতো করে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত