বাবা-ছেলে মিলে পিটিয়ে মারলেন কিশোরকে

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ১৯
Thumbnail image
নিহত কিশোর জিয়ারুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মামলা-সংক্রান্ত বিরোধে বাগ্‌বিতণ্ডায় এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বাবা-ছেলে ও ভাতিজা। মারধরের সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। এ নিয়ে এলাকায় তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। এদিন দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কিশোর জিয়ারুল ইসলাম (১৭) উচাখিলা ইউনিয়নের আলিনগর গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। মারধরকারীরা হলেন একই গ্রামের আব্দুল হক ও তাঁর ছেলে রাসেল (২৮), শফিকুল (২২) ও ভাতিজা আনোয়ার হোসেন (৩৮)।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত বছর রাশিদ ও রাসেলের এক আত্মীয়ের হাত ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে জিয়ারুল ও তাঁর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় মামলা করা হয়, পরে এটি নিষ্পত্তিও হয়। মামলার নিয়ে তাঁদের মধ্যে পূর্ববিরোধ ছিল। ২২ অক্টোবর রাতে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে মাদক কারবারি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২৩ অক্টোবর ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় জিয়ারুলকেও আসামি করা হয়।

এদিকে জিয়ারুল ভাবে প্রতিপক্ষ আব্দুল হক ও তাঁর দুই ছেলে তাকে ফাঁসাতে মামলা করেছেন। গত সোমবার আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনে আসে জিয়ারুল। উচাখিলা বাজারে সকালে রাশিদ ও রাসেলের সঙ্গে দেখা হয় জিয়ারুলের। শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা। একপর্যায়ে দুই ভাই মিলে জিয়ারুলকে মারধর করেন। এদিন বিকেলে ওই বাজারে আব্দুল হকের সঙ্গে দেখা হয় জিয়ারুলের। তখন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে আব্দুল হকের ওপর চড়াও হয়ে মারমুখী অবস্থানে যান জিয়ারুল। গতকাল দুপুরে জিয়ারুল বাড়ি থেকে অটোরিকশা দিয়ে উচাখিলা বাজারে আসছিলেন। বাজারের পাশেই ভূমি কার্যালয়ের সামনে আসা মাত্রই আগে থেকে ওত পেতে থাকা আব্দুল হকসহ তাঁর দুই ছেলে ও এক সহযোগী হামলা চালান।

সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া মারধরের দৃশ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া মারধরের দৃশ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

হামলার সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও আজকের পত্রিকার হাতে আসে। সেখানে দেখা যায়, আব্দুল হকসহ তাঁর দুই ছেলে রাসেল, শফিকুল ও ভাতিজা আনোয়ার হোসেন মিলে জিয়ারুলের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে মাটিতে ফেলে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে জিয়ারুলের। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পুলিশ আরও জানায়, জিয়ারুলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জিয়ারুলের গ্যাং উত্তেজিত হয়ে উচাখিলা বাজারের বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নিহতের মা মাহমুদা বেগম ও বাবা আলাল উদ্দিন থানায় এসে অভিযোগ দেন। তাঁরা ছেলের হত্যার বিচার চান।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কিশোরের মৃত্যুর খবর শোনার পরই গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্তরা। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা-বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতের ধরতে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত