Ajker Patrika

‘স্বামীডারে লইয়া ভিক্ষা কইরা জীবনডা আর চলে না’

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
‘স্বামীডারে লইয়া ভিক্ষা কইরা জীবনডা আর চলে না’

‘স্বামীডা আমার পঙ্গু। হুইল চেয়ারে কইরা রইদের (রোদ) মধ্যে ঘুরতাছি পাঁচ-দশ টাকার জন্য। রোজা থাইকা আর পারি না বাবা। জীবনডা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেহে না। এই রোজায় একটু দুধ, মাংস আমার কপালে জুটল না।’

আজ বুধবার নান্দাইল উপজেলা মসজিদের সামনে অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন আবাল হোসেন (৮৮) ও সোলেমা বেগম (৬৬) দম্পতি। বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ধার টানতে কতটুকু বেগ পোহাতে হয় সেটিও জানান এই দম্পতি। 

সুলেমা বেগম বলেন, ‘নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বেতগেইতা গ্রামের বাসিন্দা আবাল হোসেন। যৌবনকালে তার সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। স্বামীর জায়গা-জমি নেই। তাই শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। আগে উনি মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। গত ৪ বছর আগে পিঁছল খেয়ে পড়ে কোমর ভেঙে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। সামান্য কবিরাজী চিকিৎসা করালেও ভালো হয়নি।’ 

সুলেমা বেগম আরও বলেন, ‘এরপর থেকেই সংসারে টানাপোড়ন শুরু হয়। তিন বেলা খাবারের সংকট দেখা দেয়। পরে পঙ্গু স্বামীকে নিয়েই ভিক্ষা করতে নেমে পড়ি। প্রতিদিন ভোরে হুইল চেয়ারে করে নান্দাইল বাজার ও উপজেলার আশপাশে ঘুরে যা পাই তা দিয়েই চলে সংসার। আমাদের ছেলে নেই। এক মেয়ে ছিল, তাকে বাড়ির পাশে বিয়ে দিয়েছি। জামাই রিকশা চালায়।’ 

সোলেমা বেগম কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা এত অসহায় তবু কেউ আমাদের সহযোগিতা করে না। বয়স্ক মানুষডারে নিয়ে রোজা থেকে ভিক্ষা করতে আর পারি না। রোজার দিন সবাই দুধ, মাংস খায়। আমরা খেতে পাই না। গত কুরবানি ঈদে গরুর মাংস খেয়েছিলাম, আর কপালে জোটেনি। রাতে সেহেরির সময় লাউ ভর্তা ও সেপা (সিদল) দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখছি।’

বৃদ্ধ আবাল হোসেন বলেন, ‘আল্লাহ্ আমাকে কোনোমতে বাঁচায়ে রাখছে। খুব কষ্ট হয় রোদে ঘুরতে। আর বইসা থাকতে পারি না। সামনে ঈদ তাই একটু বেশি ঘোরাঘুরি করতাছি। কিছু টাকা হলে সেমাই, চিনি কিনতে পারব।’ 

চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘খোঁজ খবর নিয়ে পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। এখন গাড়িতে আছি কথা বোঝা যাচ্ছে না। পরে ফোন দিব বলে কল কেটে দেন।’ 

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর সোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকা বলেন, ‘যেহেতু আবাল হোসেনের বয়স্ক ভাতা কার্ড আছে দ্বিতীয় কার্ড করা যাবে না। ঈদ উপলক্ষে তাকে সহযোগিতা করা হবে। আপনি (প্রতিনিধি) পরিবারটিকে নিয়ে আসিয়েন। ঈদে যা কিছু সেমাই, চিনি, তেল, নুডলস লাগে সবগুলো কিনে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত