মৃত্যুর মিছিলে সংসারের হাল ধরা কিশোরও

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১০: ১২

অভাবের সংসারে হাল ধরতে কিশোর বয়সেই রাজধানীর অলিগলিতে রিকশা চালানো শুরু করে সোহাগ মিয়া (১৪)। তার দরিদ্র বাবাও রিকশা চালান। 
চার ভাই আর মা-বাবা মিলে ছয়জনের সংসারের খরচের সিংহভাগ চলে সোহাগের আয়ে। কিন্তু ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয় সোহাগ। গুলিটি সোহাগের ডান কানের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

সোহাগ মিয়া নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন গ্রামের সাফায়েত হোসেনের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সে। ২০ জুলাই সকালে গ্রামের বাড়ি নিয়ে তাকে দাফন করা হয়। দরিদ্র পরিবারের সোহাগের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় ৯-১০ বছর আগে সপরিবারে রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন সাফায়েত হোসেন। একার আয়ে সংসার ভালো চলছিল না তার। তাই গত দুই বছর ধরে রিকশা চালানো শুরু করে সোহাগ। এতে তাদের সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরছিল।

সোহাগের চাচা সফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামের বাড়িতে থাকার ভিটেটা পর্যন্ত নেই সাফায়েতের। অভাবের কারণে ৯-১০ বছর আগে স্ত্রী-সন্তানসহ রাজধানীতে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। চার ছেলে ও স্বামী-স্ত্রী মিয়ে ছয় সদস্যর সংসার চড়া মূল্যের বাজারে একার আয়ে আর চলছিল না। তাই বাধ্য হয়ে কিশোর ছেলে রিকশা চালানো শুরু করে। এতে তাদের সংসার কিছুটা ভালোই চলছিল।

গত ১৯ জুলাই কারফিউ চলাকালেও পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয় সোহাগ। নতুন বাজারের অলি-গলিতে দিনভর যতটুকু পেরেছে রিকশা চালিয়ে কিছু আয় করেছে। সন্ধ্যায় গ্যারেজে রিকশা রেখে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ কোখায় থেকে এসে একটি গুলি সোহাগের মাথায় লাগে। গুলিটি ডান কানের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে অনেকটা মগজ বের হয়ে গেছে। উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে কাছকাছি অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গেলে ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়।

সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, সেখানকার চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, বাড়িতে নিয়ে যেতে হলে লাশ দ্রুত বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই দেরি না করে লাশ দ্রত একটা পিকআপ ভ্যানে করে নেত্রকোনার পথে রওয়ানা করা হয়। শেষ রাতে লাশ গ্রামের বাগিদে এসে পৌঁছায়। পরে শনিবার ১০টায় জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

চাচা সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এমনিতেই অসহায় আমার ভাইটা। কর্মক্ষম ছেলেটা হারিয়ে আরও অসায় হয়ে গেল। আল্লাহর কাছেই এর বিচার দিলাম। তিনিই মহা বিচারক।’

প্রতিবেশী বৃদ্ধ আব্দুল মোতালেব বলেন, সোহাগ খুবই ভালো ছেলে ছিল। ছোট ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। তার জীবন শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল। একটা পরিবার হোঁচট খেল। অসহায় পরিবারটা আরও অসহায় হয়ে গেল।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, সে ঢাকায় গুলিতে নিহত হয়েছে। খুবই দরিদ্র পরিবার তাদের। বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত