অনুদানের চেক পেল ময়মনসিংহে আন্দোলনে শহীদ ৫৫ পরিবার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪২
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৯
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম শহীদ পরিবারকে অনুদানের চেক দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ময়মনসিংহ বিভাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ৫৫ পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালে নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে এর আয়োজন করা হয়।

চেক প্রদান অনুষ্ঠানে সব সময় শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবন দিতে হয়েছে বহু ছাত্র–জনতাকে। এখনো হাসপাতালে আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন অনেকে। ময়মনসিংহ বিভাগে শহীদ হন ৯৩ জন। আহত হন আরও অনেকে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

প্রাথমিকভাবে আজ সকালে নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে ৫৫ জন শহীদ পরিবারের হাতে অনুদানের চেক দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চেক পেয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা আপ্লুত হয়ে পড়েন।

একমাত্র সন্তানের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নগরীর পুরোহিতপাড়ার সামিরা জাহান মনি। থাকতেন ঢাকার আজিমপুরে। ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহিনকে ভর্তি করিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

অনুদানের চেক পেয়ে দুচোখের পানি ফেলে সামিরা জাহান মনি বলেন, ‘একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আজ আমি একাকিত্ব জীবন যাপন করছি। সন্তানের রক্তে যে দেশ পেয়েছি—সেটা ভালো চলুক, এর চেয়ে আর চাওয়ার কিছু নেই। আজিমপুরে ৪ আগস্ট ছেলের মাথায় দুটি গুলি লাগে ওই দিন রাত ১২টায় সে হাসপাতালে মারা যায়। এরপর সবকিছু গুটিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসছি।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আহত ও শহীদদের সঠিক তথ্য সংগ্রহে কাজ করার কথা জানিয়ে তাঁদের পাশে সব সময় থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন সারজিস আলম।

সারজিস বলেন, ‘শহীদ এবং আহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে আমাদের এই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে। আপনারা সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। আমরা আমাদের ফাউন্ডেশনের হিসাব সঠিক না রাখলে ২০ বছর পরও যদি শেখ হাসিনার দোসররা ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই কারণে আমাদের জেলে যেতে হবে। তাই এটিকে একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ ফাউন্ডেশন করতে চাই।’

সারজিস আরও বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। প্রশাসনের মধ্যে যারা জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। আজকে যাঁরা পদ পেয়েছেন, তা আমাদের আন্দোলনের জন্য। আর আপনারা যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আপনাদের পদে থাকার প্রয়োজন নেই। আপনাদের মধ্যে যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার আপনাদেরই করতে হবে।’

সারজিস আরও বলেন, ‘আমরা যদি বেঁচে থাকি, তাহলে আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও শহীদ পরিবারের পাশে থাকব। তাদের শরীরে বিন্দু পরিমাণ আঁচ লাগতেও দেব না।’

এই ফাউন্ডেশনের যাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ইউসুফ আলী বলেন, ‘শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, শহীদ পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। আহতদেরও করা হবে সহযোগিতা। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত