ঈশ্বরগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেকারিপণ্য তৈরি, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৩২
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন খাবার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বেকারিপণ্য তৈরির অভিযোগ উঠেছে। খাবার আকর্ষণীয় ও মুচমুচে করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যামোনিয়াম সালফেটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। এসব খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি উপজেলার বেশ কয়েকটি বেকারি ঘুরে জানা গেছে, কারখানাগুলোর ভেতরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে ও দুর্গন্ধযুক্ত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। আটা-ময়দা, রাসায়নিক দ্রব্যসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নোংরা অবস্থায় রাখা হয়েছে। দুটি বেকারিতে পা দিয়ে ঘর্মাক্ত শরীরে শ্রমিকদেরকে আটা-ময়দা মেশানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজ থামিয়ে দেন শ্রমিকেরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক-শ্রমিকেরা বলেন, ‘কাজ করলে তো একটু এদিক-সেদিক হবেই’।

গত রোববার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার কয়েকটি বেকারি ও কারখানা পরিদর্শন করেন উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বেদেনা আক্তার। পরিদর্শনকালে বেকারিগুলোর অস্বাস্থ্যকর, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে খাবার তৈরির দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে। এ সময় দয়াল বেকারিকে খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ রং ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের প্রমাণ পান তিনি। তখন প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআই লাইসেন্সসহ বিভিন্ন অনুমোদনের নথিপত্র দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেনি দয়াল বেকারির কর্তৃপক্ষ। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিতে নোটিশ দেন বেদেনা আক্তার।

নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ৯টি বেকারি আছে। এসবের মধ্যে দয়াল বেকারি, সোহাগ বেকারি, লাবীব বেকারি ও এইচ ফুড প্রোডাক্টস ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত। উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নে শাহজালাল বেকারি, নিউ মদিনা বেকারি ও তানহা বেকারি। মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে মায়ের দোয়া বেকারি ও উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারে রুমান বেকারি। যেগুলোর একটিরও বিএসটিআয়ের অনুমোদন নেই।

এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেখতে সুন্দর। মুখরোচক। তাই সাধারণ মানুষ খাদ্যের নামে এগুলো বিষ কিনে খাচ্ছে। মানুষকে তো এগুলো খাওয়া থেকে ফেরানো যাবে না, তবে প্রশাসন চাইলেই বেকারি মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। তাহলে অন্তত ভেজাল দ্রব্য মেশানো থেকে বিরত থাকবে অসাধু মালিকেরা।’

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি বেকারি পরিদর্শন করছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি বেকারি পরিদর্শন করছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, কম খরচে পাউরুটি ফোলানোসহ কেক-বিস্কুটের বিভিন্ন আকৃতি দিতে বেকারিগুলোতে অ্যামোনিয়াম সালফেটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়।

দয়াল বেকারির কামাল হোসেন, এইচ ফুড প্রোডাক্টসের গোলাম হারুন, সোহাগ বেকারির আলম, মায়ের দোয়া বেকারির বাবুল মিয়া বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে খাবারে অ্যামোনিয়াম সালফেট মেশানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, বেকারিগুলোতে অ্যামোনিয়াম সালফেটের ব্যবহার অহরহ হয়ে থাকে। এটা এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। অধিক তাপমাত্রাতেও অ্যামোনিয়াম সালফেট খাদ্যে থেকে যায়, যা পরে খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, লিভার, কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। শুধু তা-ই নয়, মরণব্যাধি ক্যানসারও হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, খাবারে কোনো ধরনের ক্ষতিকর উপাদান মেশানোর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ময়মনসিংহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস ছালাম বলেন, নিষিদ্ধ কোনো দ্রব্য খাবারে ব্যবহারের সুযোগ নেই। অচিরেই বেকারিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগের বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বেকারিগুলোতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। অনুমোদন না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত