Ajker Patrika

পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করে গ্রেপ্তার: পাঁচ খেলোয়াড়কে জামিন দিয়েছেন আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৮: ৩৬
পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করে গ্রেপ্তার: পাঁচ খেলোয়াড়কে জামিন দিয়েছেন আদালত

পুলিশকে পেটানোর মামলায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসে অংশ নেওয়া ১১ খেলোয়াড়ের ৫ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান এই আদেশ দেন। আদালত এই পাঁচ খেলোয়াড়কে পুলিশের প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন। জামিন পাওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজন মেয়ে ও একজন ছেলে। বাকি ৬ খেলোয়াড় ও কোচ বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আদালত বলেন, জামিনে থাকাকালীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা তাঁদের দিকে খেয়াল রাখবেন। তাঁকেও খেলোয়াড়দের আচরণ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ সকালে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী পাঁচ খেলোয়াড় রাজশাহীর আদালতে জামিন নিতে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বর্ণনা দেয়। তারা জানায়, ট্রেনে হারানো ব্যাগ খুঁজতে গেলে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে ধাক্কা লাগে এক নারী খেলোয়াড়ের। এ সময় ওই খেলোয়াড়কে চড় মারেন কিবরিয়া। তাঁকে থামতে বলায় জামার কলার ধরে চড় মারেন আরেক পুরুষ খেলোয়াড়কে। তাঁর এমন আচরণ দেখে খেলোয়াড়েরাও তাঁকে মারেন। এতে তাঁর নাক ফেটে যায়। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গতকাল রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে আজ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে খেলোয়াড়েরা বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

গ্রেপ্তার ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তাঁরা হলেন আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। গ্রেপ্তার কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।

শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস শেষ করে গতকাল ট্রেনে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন ২২ জন খেলোয়াড়। দুপুরে স্টেশনে নামার সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা-পুলিশ দুই পক্ষকেই স্টেশন থেকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে একজন কোচ ও ১২ জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়া। তাঁদের মধ্যে একজন খেলোয়াড় ছাড়া সবাইকে থানায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতেই তাঁদের রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজন খেলোয়াড়কে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ তোলা হয়। এ সময় তাদের আইনজীবী মাইনুর রহমান জামিন আবেদন করেন। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। আদালত এই শিশুদের আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত জামিন দেন। পরে আজ সকালে তারা আবার আদালতে হাজির হলে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক এই পাঁচজনের জামিন মঞ্জুর করেন।

আইনজীবী মাইনুর রহমান বলেন, এই শিশুদের বিরুদ্ধে এজাহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। যে অভিযোগ আছে, তা-ও জামিনযোগ্য। তাই পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে আদালত আদেশ দিয়েছেন যে এই শিশুদের বিষয়ে খেয়াল রাখবেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা। তিনিও একটা প্রতিবেদন দেবেন।

এই পাঁচজনের জামিন শুনানির সময় কারাগারে থাকা খেলোয়াড়দের স্বজনেরাও আদালতে গিয়েছিলেন। কারাগারে থাকা কুস্তি খেলোয়াড় আকাশ আলী মোহনের বাবা আসাদ আলী বলেন, ‘প্রায় আট বছর ধরে আমার ছেলে খেলে। ট্রেনে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যই প্রথমে মহিলা খেলোয়াড়ের গালে থাপ্পড় মারেন। তখন এ ঘটনা ঘটে গেছে। এই ছেলেদের মধ্যে কয়েকজন আগামী ১৮ তারিখে ভারতে খেলতে যাবে। এই সুযোগটা যেন নষ্ট না হয়।’ 

কারাগারে থাকা খেলোয়াড় রিমি খানমের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘যুব গেমসে এবার তিনজনকে হারিয়ে আমার মেয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। জামিন না পেলে এদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা চাই এটার মীমাংসা হয়ে যাক।’

ট্রেনে থাকা ১২ বছর বয়সী এক কুস্তি খেলোয়াড় বলে, ‘খেলায় যারা জিতেছিল তাদের টাকা, মেডেলসহ সবই ব্যাগে ছিল। ওই ব্যাগই হারিয়ে যায়। খুঁজতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়। ওই পুলিশ তখন এক আপুকে থাপ্পড় মেরে দেয়। এরপর এক ভাইয়া এসে ঝামেলা না করার জন্য বলেন। তখন তাঁকেও গলা ধরে থাপ্পড় মারে। পুলিশ তখন হুমকি দেয়, তোদের সবার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেব। এরপরই এই মামলা করা হয়েছে।’

যে পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে মারামারি, তাঁর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে যায়। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গোলাম কিবরিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রেন থামার পর আমি নামছিলাম। তখন খেলোয়াড়েরা ট্রেন থেকে নেমে আবার উঠছিল। আমি আগে নামতে দেওয়ার জন্য বলি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে খেলোয়াড়েরা আমাকে মারেন। ১২ থেকে ১৩ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমিও পেরে উঠিনি। একজন খেলোয়াড়কেও আমি মারিনি।’ 

কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার বলেন, ভাই পুলিশ সদস্য বলে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকার পুলিশ হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। দুপুরেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। রাতে গোলাম কিবরিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যাবেন বলেও জানান গোলাম সারওয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত