নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আটকের পর বিজলী কুমার রায় (৪০) শুধু নিজের নামটাই বলতে পেরেছিলেন। বাড়ি জানতে চাইলে বলতেন, ‘বিহার।’ আর কিছুই বলতে পারতেন না। শরীয়তপুর কারা কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয়, তাঁর বাড়ি ভারতের বিহার। প্রত্যর্পণের সুবিধায় তাঁকে পাঠিয়ে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে। ছয় মাসের সাজা শেষ হয়, বিজলী বাড়ি যেতে চান। বিজিবি তাঁকে সীমান্তে নিয়ে যায়, কিন্তু অভিভাবক নেই বলে ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ। বিজলীর বাড়ি ফেরা হয় না। অবশেষে তিনি যখন বাড়ি ফিরবেন, কিন্তু জীবিত নন লাশ হয়ে।
বিজলীর বাড়ি ফেরার গল্পটা সিনেমার মতো। গত বছর অক্টোবরে বিজলীর খোঁজ পান ঢাকার সাংবাদিক শামসুল হুদা। তিনি এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটকে থাকা ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন ‘বাঙালি বজরঙ্গি ভাইজান।’ ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ সিনেমার ছোট্ট মেয়েটি বাক্প্রতিবন্ধী। আর বিজলী কুমার মানসিক ভারসাম্যহীন। আজ শুক্রবার বিজলীর মরদেহ নিয়ে সীমান্তে যান সাংবাদিক শামসুল হুদা।
কীভাবে বিজলীর খোঁজ পাওয়া গেল, সে গল্পটি শুনিয়েছেন শামসুল হুদা। তিনি জানান, ২০২১ সালের মে মাসে শরীয়তপুরের জাজিরা থানার পুলিশ বিজলী রায়কে আটক করে। তারপর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতে তাঁর ছয় মাসের জেল হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয় বিজলীর বাড়ি ভারতের বিহারে। তাই প্রত্যর্পণের সুবিধার্থে তাঁকে পাঠিয়ে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে। এখানে এমন বন্দীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১। গত বছরের অক্টোবরে এই কারাগার পরিদর্শনে যান চুয়াডাঙ্গার একজন জেল সুপার। তিনি শামসুল হুদার কথা জানতেন।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেল সুপারকে জানান, শামসুল হুদা আটকে পড়া এমন বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। তারপর ফোন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল সুপার। তিনি ১১ জন বন্দীর একটি তালিকা দেন। কাজ শুরু করেন শামসুল হুদা। এরই মধ্যে ছয়জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এরপর বিজলী রায়কে নিয়ে কাজ করছিলেন শামসুল হুদা। বাড়ি ফেরার আগেই তিনি মারা গেলেন।
বিজলীকে খুঁজে পাওয়া থেকে পরিবারের কাছে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পুরো ঘটনা নিয়ে বর্ণনা দেন শামসুল। তাঁর বর্ণনায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিহারের মোজাফফরপুর জেলার মিনাপুর থানার একটি গ্রামে বিজলী রায়ের পরিবারকে খুঁজে পান। এ ব্যাপারে সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত যথেষ্ট সহায়তা করেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর বিজলী রায়ের যাবতীয় অফিশিয়াল ডকুমেন্ট ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়। বিজলীর ভাই বদ্রি রায় মাঝেমধ্যেই ফোন করে খোঁজ নিতেন। জানাতেন তাঁর ভাইয়ের শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে, সে যেন ভালো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানাতে থাকেন। বদ্রি রায় বেশ কয়েকবার তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকটি ছবি বদ্রিকে পাঠানো হয়েছিল।
তখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৫ জানুয়ারি বদ্রি রায় বিহার থেকে শামসুল হুদাকে ফোন করেন। জানান, বাংলাদেশ থেকে কেউ একজন তাঁকে কল করেছিলেন। সেই নম্বরটি নিয়ে কল করলে শামসুল হুদা দেখেন, এটি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আমানুল্লাহর নম্বর। শামসুল হুদা ভাবলেন, বিজলী রায় তো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে ছিলেন। তাহলে রাজশাহী জেলার কেন তাঁকে ফোন করলেন? প্রশ্ন করতেই শুনলেন দুঃসংবাদ। বিজলী কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী পাঠানো হয়। রাজশাহী আসার পর বিজলী রায় মারা গেছেন।
এরপর বিজলী রায়ের মরদেহ ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হিমঘরে। এদিকে তাঁর মরদেহ বিহারে পাঠানোর তৎপরতা শুরু করেন শামসুল হুদা। চিঠি চালাচালি চলতে থাকেন। ১৬ জানুয়ারি সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিজলীর মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করেন।
মহাপরিদর্শক দপ্তর থেকে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে চিঠিটি দূতাবাসে পৌঁছে। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ১৩ দিনের মধ্যেই ১২ ফেব্রুয়ারি বিজলী রায়ের মরদেহটি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারি পরিপত্র জারি করে। দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে কারা অধিদপ্তরের কাছে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন শামসুল হুদা।
পরবর্তীকালে ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে একটি চিঠি ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়। এর সূত্র ধরে কারা কর্তৃপক্ষ এবং মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কি না খোঁজ করতে থাকলেও কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ৩ মার্চ হাইকমিশন থেকে পাওয়া সুরক্ষা বিভাগের চিঠিটি কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হলে এর ভিত্তিতে শেষ বিকেলে ত্বড়িত গতিতে বিজলী রায়ের মরদেহের ছাড়পত্র রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজিবিকে অনুরোধ করে চিঠি দেয়। বিজিবি তখন চিঠি দেয় বিএসএফকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিএসএফের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয় যে তারা মরদেহ গ্রহণ করতে সম্মত। ওই রাতেই বিজিবির সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘দেশের কোনো বন্দী মারা গেলে আমরা পরের দিনের মধ্যেই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে পারি। কিন্তু ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তা হয় না। প্রথমে মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তরকে জানাতে হয়। ভারতীয় দূতাবাসকেও জানাতে হয়। দূতাবাস তখন ভারতে ভেরিফিকেশন করে যে ওই ব্যক্তি ভারতীয় কি না। এরপরই তারা লাশ গ্রহণে সম্মত হয়। এ প্রক্রিয়ায় একটা সময় লেগে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সবশেষ বিএসএফের ক্লিয়ারেন্সটা আমরা গত রাত ৮টায় পাই। এরপরই আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ জানাই। বিজিবি সব ব্যবস্থা করে। আজ ভোরে রামেক হাসপাতালের হিমঘর থেকে লাশ কারাগারের সামনে আনা হয়। সেখানে অফিশিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।’
বিজলীর পরিবারকে খুঁজে পেতে সাংবাদিক শামসুল হুদার বড় অবদান রয়েছে বলে জানান জেলা কারাগারের জেলার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিজলীর পরিবারকে খুঁজে পেতে সাংবাদিক শামসুল হুদা বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এই কাজটা অনেক দিন ধরেই করছেন।’
সাংবাদিক শামসুল হুদা রোটারি ক্লাব অব বনানীর সদস্য। গত ৮ মার্চ সংগঠনের সাপ্তাহিক বৈঠকে বিজলী কুমারের মরদেহ পাঠানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত সবাই পরিবারের সদস্যর কাছে মরদেহটি পৌঁছানোর দায়িত্ব শামসুল হুদাকেই দেন। বরাদ্দ করা হয় অর্থও। আর মরদেহটি রাজশাহী থেকে বিহার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপনায় ছিল ঢাকা পেকার্স। কফিন থেকে সবকিছুই ব্যবস্থা করেছে ঢাকা পেকার্স।
শামসুল হুদা জানান, দুপুরে তাঁরা সোনামসজিদ স্থলবন্দরে লাশ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বিজলী কুমারের ভাই এসেছেন। স্থানীয় থানা-পুলিশ আসার পর লাশ হস্তান্তর হবে। তিনি ভাইয়ের কাছে বিজলীর লাশ হস্তান্তর করে ফিরে আসবেন।
আটকের পর বিজলী কুমার রায় (৪০) শুধু নিজের নামটাই বলতে পেরেছিলেন। বাড়ি জানতে চাইলে বলতেন, ‘বিহার।’ আর কিছুই বলতে পারতেন না। শরীয়তপুর কারা কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয়, তাঁর বাড়ি ভারতের বিহার। প্রত্যর্পণের সুবিধায় তাঁকে পাঠিয়ে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে। ছয় মাসের সাজা শেষ হয়, বিজলী বাড়ি যেতে চান। বিজিবি তাঁকে সীমান্তে নিয়ে যায়, কিন্তু অভিভাবক নেই বলে ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ। বিজলীর বাড়ি ফেরা হয় না। অবশেষে তিনি যখন বাড়ি ফিরবেন, কিন্তু জীবিত নন লাশ হয়ে।
বিজলীর বাড়ি ফেরার গল্পটা সিনেমার মতো। গত বছর অক্টোবরে বিজলীর খোঁজ পান ঢাকার সাংবাদিক শামসুল হুদা। তিনি এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটকে থাকা ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন ‘বাঙালি বজরঙ্গি ভাইজান।’ ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ সিনেমার ছোট্ট মেয়েটি বাক্প্রতিবন্ধী। আর বিজলী কুমার মানসিক ভারসাম্যহীন। আজ শুক্রবার বিজলীর মরদেহ নিয়ে সীমান্তে যান সাংবাদিক শামসুল হুদা।
কীভাবে বিজলীর খোঁজ পাওয়া গেল, সে গল্পটি শুনিয়েছেন শামসুল হুদা। তিনি জানান, ২০২১ সালের মে মাসে শরীয়তপুরের জাজিরা থানার পুলিশ বিজলী রায়কে আটক করে। তারপর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতে তাঁর ছয় মাসের জেল হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয় বিজলীর বাড়ি ভারতের বিহারে। তাই প্রত্যর্পণের সুবিধার্থে তাঁকে পাঠিয়ে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে। এখানে এমন বন্দীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১। গত বছরের অক্টোবরে এই কারাগার পরিদর্শনে যান চুয়াডাঙ্গার একজন জেল সুপার। তিনি শামসুল হুদার কথা জানতেন।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেল সুপারকে জানান, শামসুল হুদা আটকে পড়া এমন বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। তারপর ফোন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল সুপার। তিনি ১১ জন বন্দীর একটি তালিকা দেন। কাজ শুরু করেন শামসুল হুদা। এরই মধ্যে ছয়জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এরপর বিজলী রায়কে নিয়ে কাজ করছিলেন শামসুল হুদা। বাড়ি ফেরার আগেই তিনি মারা গেলেন।
বিজলীকে খুঁজে পাওয়া থেকে পরিবারের কাছে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পুরো ঘটনা নিয়ে বর্ণনা দেন শামসুল। তাঁর বর্ণনায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিহারের মোজাফফরপুর জেলার মিনাপুর থানার একটি গ্রামে বিজলী রায়ের পরিবারকে খুঁজে পান। এ ব্যাপারে সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত যথেষ্ট সহায়তা করেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর বিজলী রায়ের যাবতীয় অফিশিয়াল ডকুমেন্ট ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়। বিজলীর ভাই বদ্রি রায় মাঝেমধ্যেই ফোন করে খোঁজ নিতেন। জানাতেন তাঁর ভাইয়ের শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে, সে যেন ভালো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানাতে থাকেন। বদ্রি রায় বেশ কয়েকবার তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকটি ছবি বদ্রিকে পাঠানো হয়েছিল।
তখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৫ জানুয়ারি বদ্রি রায় বিহার থেকে শামসুল হুদাকে ফোন করেন। জানান, বাংলাদেশ থেকে কেউ একজন তাঁকে কল করেছিলেন। সেই নম্বরটি নিয়ে কল করলে শামসুল হুদা দেখেন, এটি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আমানুল্লাহর নম্বর। শামসুল হুদা ভাবলেন, বিজলী রায় তো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে ছিলেন। তাহলে রাজশাহী জেলার কেন তাঁকে ফোন করলেন? প্রশ্ন করতেই শুনলেন দুঃসংবাদ। বিজলী কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী পাঠানো হয়। রাজশাহী আসার পর বিজলী রায় মারা গেছেন।
এরপর বিজলী রায়ের মরদেহ ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের হিমঘরে। এদিকে তাঁর মরদেহ বিহারে পাঠানোর তৎপরতা শুরু করেন শামসুল হুদা। চিঠি চালাচালি চলতে থাকেন। ১৬ জানুয়ারি সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিজলীর মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করেন।
মহাপরিদর্শক দপ্তর থেকে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে চিঠিটি দূতাবাসে পৌঁছে। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ১৩ দিনের মধ্যেই ১২ ফেব্রুয়ারি বিজলী রায়ের মরদেহটি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সরকারি পরিপত্র জারি করে। দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে কারা অধিদপ্তরের কাছে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন শামসুল হুদা।
পরবর্তীকালে ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ থেকে একটি চিঠি ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়। এর সূত্র ধরে কারা কর্তৃপক্ষ এবং মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কি না খোঁজ করতে থাকলেও কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ৩ মার্চ হাইকমিশন থেকে পাওয়া সুরক্ষা বিভাগের চিঠিটি কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হলে এর ভিত্তিতে শেষ বিকেলে ত্বড়িত গতিতে বিজলী রায়ের মরদেহের ছাড়পত্র রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজিবিকে অনুরোধ করে চিঠি দেয়। বিজিবি তখন চিঠি দেয় বিএসএফকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিএসএফের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয় যে তারা মরদেহ গ্রহণ করতে সম্মত। ওই রাতেই বিজিবির সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘দেশের কোনো বন্দী মারা গেলে আমরা পরের দিনের মধ্যেই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে পারি। কিন্তু ভারতীয়দের ক্ষেত্রে তা হয় না। প্রথমে মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তরকে জানাতে হয়। ভারতীয় দূতাবাসকেও জানাতে হয়। দূতাবাস তখন ভারতে ভেরিফিকেশন করে যে ওই ব্যক্তি ভারতীয় কি না। এরপরই তারা লাশ গ্রহণে সম্মত হয়। এ প্রক্রিয়ায় একটা সময় লেগে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সবশেষ বিএসএফের ক্লিয়ারেন্সটা আমরা গত রাত ৮টায় পাই। এরপরই আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুরোধ জানাই। বিজিবি সব ব্যবস্থা করে। আজ ভোরে রামেক হাসপাতালের হিমঘর থেকে লাশ কারাগারের সামনে আনা হয়। সেখানে অফিশিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।’
বিজলীর পরিবারকে খুঁজে পেতে সাংবাদিক শামসুল হুদার বড় অবদান রয়েছে বলে জানান জেলা কারাগারের জেলার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিজলীর পরিবারকে খুঁজে পেতে সাংবাদিক শামসুল হুদা বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এই কাজটা অনেক দিন ধরেই করছেন।’
সাংবাদিক শামসুল হুদা রোটারি ক্লাব অব বনানীর সদস্য। গত ৮ মার্চ সংগঠনের সাপ্তাহিক বৈঠকে বিজলী কুমারের মরদেহ পাঠানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত সবাই পরিবারের সদস্যর কাছে মরদেহটি পৌঁছানোর দায়িত্ব শামসুল হুদাকেই দেন। বরাদ্দ করা হয় অর্থও। আর মরদেহটি রাজশাহী থেকে বিহার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপনায় ছিল ঢাকা পেকার্স। কফিন থেকে সবকিছুই ব্যবস্থা করেছে ঢাকা পেকার্স।
শামসুল হুদা জানান, দুপুরে তাঁরা সোনামসজিদ স্থলবন্দরে লাশ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। বিজলী কুমারের ভাই এসেছেন। স্থানীয় থানা-পুলিশ আসার পর লাশ হস্তান্তর হবে। তিনি ভাইয়ের কাছে বিজলীর লাশ হস্তান্তর করে ফিরে আসবেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টানা ৫৭ ঘণ্টার অনশনের পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণায় অনশন ভেঙে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত রাত ১টার (বৃহস্পতিবার) পর তারা অনশন ভাঙেন।
১ ঘণ্টা আগেঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। আশার কথা শুনিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। পালিয়ে থাকার তথ্য দিলেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক...
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫ ’। পাশাপাশি ইয়ুথ হাবে তরুণদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মশালা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নেটওয়ার্কিং সেশন চলছে।
৫ ঘণ্টা আগেপেশাদার মোটরযান চালকদের নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতে ও নবায়ন করাতে মেডিকেল সার্টিফিকেট (চিকিৎসা সনদ) বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা লাইসেন্সও পেয়ে যাচ্ছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন..
৬ ঘণ্টা আগে