পাবনার বেড়া পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাচা-ভাতিজার মধ্যে দ্বন্দ্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাঁদের মুখোমুখি অবস্থানে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় ভাতিজা নৌকার প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের গণসংযোগে অতর্কিত হামলার পাশাপাশি কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে চাচা বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল বাতেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার সুম্বুপাড়া মহল্লা ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতরা হলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আব্দুল জব্বার (৩২), সাইদুল ইসলাম গায়েন (৪০), সাদ্দাম হোসেন (৩৩), কালু গায়েন (৪২), মহিলা খাতুন (৩৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয়রা জানান, রাতে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে নৌকার ভোট চাইতে গণসংযোগ করছিলেন আসিফ শামস রঞ্জন। তিনি তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে অগ্রসরের সময়ে রাত ৯টার দিকে মেয়র বাতেনের সমর্থক জাহাঙ্গীর খাঁ ও সামসুল আলমের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একটি দল রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দিকে গণসংযোগ নিয়ে গেলে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ধাওয়া দিলে তারা পালানোর সময় জনতার রোষানলে পড়ে কয়েকজনকে গণধোলাই দিলে আহত অবস্থায় তারা পালিয়ে যায়। 

স্থানীয়রা আরও জানান, চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বে পৌরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ভোটের দিন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। প্রতিদিনই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। 

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামসুল হক টুকুর ছেলে অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ করতে থাকলে পৌর এলাকার সুম্বুপাড়া মহল্লায় মোড়ে বিপরীত দিক থেকে নারিকেলগাছ মার্কার প্রার্থী আব্দুল বাতেনের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। পরে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন আহত হন। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারিকেলগাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী ও শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন বলেন, ‘জনসমর্থন না পেয়ে নৌকার প্রার্থী রঞ্জন তাঁর এমপি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে সেটা সবাই অবগত। আমাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে এখনো চেষ্টা করছে। আমার কর্মীদের হয়রানি করতেই তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজেরা গণসংযোগে হামলা চালিয়ে ককটেল নিক্ষেপ করেছে।’ 

বেড়া মডেল থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, `উভয় পক্ষের গণসংযোগের সময় সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানতে পেরেছি। কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তবে পুলিশ ককটেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করছে বলে জানান তিনি। 

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী বলেন, অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ককটেল নিষ্ক্রিয় করতে থানার পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, আগামী (২৮ নভেম্বর) তৃতীয় ধাপে পাবনার বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।