Ajker Patrika

গাঁজা সেবন বাধা দেওয়ায় শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর

রাবি প্রতিনিধি
গাঁজা সেবন বাধা দেওয়ায় শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর

গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ওই ছাত্রলীগ কর্মীও আহত হন। আহতেরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। 

আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান পুলক ও চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু অম্বর ফয়েজি অপু। 

অন্যদিকে আহত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন। 

এ ঘটনায় জড়িত অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন—তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, সিফাত সালাম, শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ, তাসিন তানভীর, মৃদুল প্রমুখ। এ সময় তাদের সঙ্গে অন্তত ৪০ জন নেতা-কর্মী মারধরে অংশ নেন। জড়িত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, আজ বিকেল ৪টার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পেছনে গাঁজা সেবন করছিলেন বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এ সময় সেখানে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করেন চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন তাদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা অপু এবং পুলককে জানান। তারা সেখানে আসলে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় বন্ধনের মাথা ফেটে যায়। 

পরে আহত বন্ধন এ ঘটনা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের জানালে ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অপুকে রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। পুলক পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে তাঁকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। 

অন্যদিকে ঘটনাস্থলে অবস্থিত দোকানি রফিককে ধাক্কা দিয়ে তাঁর ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ৬ হাজার টাকা ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 

এ বিষয়ে আহত মেহেদি হাসান পুলক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক ছোট ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলে, অপু ভাইয়ের সাথে ক্যাম্পাসের ছোট ভাইয়েরা খারাপ ব্যবহার করছে, ভাই একটু আসেন। আমি যাওয়ার পর ওরা আমার দিকে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা মারে। এরপর ওরা সবাই মিলে আমাকে মারা শুরু করে।’ 

আহত আবু অম্বর ফয়েজি অপু বলেন, ‘আমার কয়েকটা ছোট ভাই বন্ধনকে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করায় তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এ সময় বন্ধন ও তার বন্ধুরা আমার ওপর চড়াও হয়। পরে সে আমাকে আটকে রেখে তাঁর বন্ধুদের ফোন দেয়। তারা এসে অতর্কিতভাবে আমাদেরকে মারধর শুরু করেন।’ 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ শেখ বন্ধন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ও আমার বন্ধুরা চারুকলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একজন শিক্ষার্থী এসে জিজ্ঞাসা করে তোরা কারা? আমরা আমাদের পরিচয় দেই। পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা বলে তোরা এখানে কী করতে আসছিস? এরপরে তার সাথে কথা-কাটাকাটি হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তারপর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই আসে। তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তারা বলে আমাদের বাসা কাজলায়, চারুকলায় তোরা আমাদের চিনিস না? এভাবে কথা বলতে বলতে তারা আমার জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে, সামনে থেকে মুখে চড়-থাপ্পড়, ঘুষি মারে। পেছন থেকে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। পরে আমি আমার বন্ধুদের ফোন দিই, তারা এসে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে।’ 

গাঁজা সেবনের বিষয়টি অস্বীকার করে বন্ধন বলেন, ‘গাঁজা নয়, আমরা সিগারেট খাচ্ছিলাম।’ 

মারধরে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত খান সময় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পুলক ভাইয়ের হাতে থাকা লাঠি কেড়ে নিয়েছিলাম, যাতে সে আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। তবে সেই লাঠি দিয়ে আমি কাউকে মারধর করিনি।’ 

ছাত্রলীগ কর্মী শামসুল আরেফিন খান সানি বলেন, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি। যারা মারধর করছিল তাদেরকে ফিরিয়েছি।’ 

ছাত্রলীগ কর্মী আল ফারাবি ‘পরে কথা বলছি’ বলে ফোন কেটে দেন। 

রাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকাএ দিকে দোকান ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকানদার রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মারামারির সময় তারা আমার দোকানে ভাঙচুর করে ক্যাশবক্সে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা লুট করেছে। তারা আমার স্ত্রীকেও মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘চারুকলায় একটা ছোট সমস্যা হয়েছিল। পরে আমি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে এ সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি। তবে মারধরে কেউ জড়িত থাকলে, আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’ 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘গাঁজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলাটা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনা চারুকলা অনুষদের বাউন্ডারির ভেতর ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা ডিন মহোদয় বরাবর একটা আবেদন করবে। তারপর ডিন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবে। তারপর আমরা প্রশাসন দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত