Ajker Patrika

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সময় বন্ধ ছিল সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ২৬
ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সময় বন্ধ ছিল সিসি ক্যামেরা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি যখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন বন্ধ ছিল রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। চলচ্চিত্রকর্মীরা সিসি ক্যামেরার ডিভিআরে বাড়ি ভাঙার কোনো ভিডিও ফুটেজ পাননি। 

বাড়িটি ভেঙে ফেলার পর গতকাল বুধবার চলচ্চিত্রকর্মীরা ওই কলেজ থেকে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর জব্দ করে নিয়ে যান। তখন নির্মাতা তাওকীর শাইক বলেছিলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরার ডিভিআর নিয়েছি। আমরা দেখব, এটা কারা ভেঙেছে। ফুটেজ না থাকলে এর দায় নিতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। যদি কলেজ কর্তৃপক্ষই বাড়ি ভাঙে তাহলে অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে।’ 

ডিভিআর যাচাই করার পর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর শাহরিয়ার কামাল এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ডিভিআরে বাড়িটি ভাঙার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। বাড়িটি যখন ভাঙা হয়, তখন সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। 

শাহরিয়ার কামাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ওনারা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) ৬ তারিখ রাত থেকে বাড়ি ভাঙার কথা আমাদের জানান। কিন্তু ফুটেজ চেক করে আমরা পাই ৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা চালু ছিল। তার পর থেকে ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফুটেজ চেক করতে গিয়ে ডিভিআর বন্ধ রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখানে বোঝা যায় গলদ কিসে আছে।’

তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর চেক করার সময় রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজের দুজন প্রতিনিধি, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির তিনজন প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। শাহরিয়ার কামাল মনে করছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখে পরিকল্পিতভাবে বাড়িটি ভেঙে ফেলেছে। 

৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা চালু ছিল। এ সময় ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি অক্ষত দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়া এলাকার এই পৈতৃক বাড়িতে কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের সময় কেটেছে। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়। 

এরপর জায়গাটির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। এ ভবনের দক্ষিণ অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। বাড়িটি অপসারণ করে সেখানে অন্য স্থাপনা করার চেষ্টা অনেক আগে থেকেই করছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

সাংস্কৃতিককর্মীদের বাধার মুখে বারবার তা বন্ধ হয়েছে। সাংস্কৃতিককর্মীদের দাবির মুখে বাড়িটি সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এর মধ্যেই চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে ৬ ও ৭ আগস্ট গোপনে বাড়িটি ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। এখন সেখানে ভাঙা বাড়ির ইটগুলো স্তূপাকারে রয়েছে। ঋত্বিকের আর তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের দাবি করেন, ৬ আগস্ট কিছু ছাত্র এসে প্রথমে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেন। পরে ভাঙা বাড়ি তাঁরা শ্রমিক এনে ‘পরিষ্কার’ করতে শুরু করেন। নিজেরাই বাড়িটি ভেঙে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করছেন অধ্যক্ষ। 

সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনলাম যে সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এর আগেও একবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সিসি ক্যামেরায় কোনো সমস্যা আছে কি না তা আমি জানি না।’ 

অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জানান, তাঁর কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসান। অধ্যক্ষ দাবি করেন, ৬ আগস্ট ভাঙা বাড়ির ইট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে কলেজে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি বিষয়টি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসানকে ফোন করে জানান এবং তাঁর অনুমতি নিয়ে তিনি পরিষ্কার করার কাজে হাত দেন। 

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা এ বাড়ি কারা ভেঙেছে, তা তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এই তদন্ত কমিটি করার পর আজ বৃহস্পতিবার কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহিনুল হাসান প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। 

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়িটি স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মীরাই রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। এর মধ্যেই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। যারাই এ বাড়ি ভাঙে না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত