রিটার্নিং কর্মকর্তার কথায় কান দিলেন না এমপি ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ২১: ০২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এখন প্রতীক বরাদ্দের আগে নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা দলের পক্ষে কেউ কোন সভা-সমাবেশ করে ভোট চাইতে পারবেন না। নির্বাচনী এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বৃহস্পতিবার তানোরে দুটি সভা করেন। সভা থেকে তিনি দলীয় প্রতীকে ভোটও চান।

বিষয়টি জানতে পেরে এই আসনের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবারই এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য এমপিকে অনুরোধ করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ কথায় কান না দিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী পরদিন আজ শুক্রবারই গোদাগাড়ী উপজেলায় সভা করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার তানোরের কলমা ও পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সভা দুটির আয়োজন করে। এ সভায় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগী ও ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়। আজ শুক্রবারও গোদাগাড়ী সদর, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ দুটি সভার আয়োজন করে।

তানোরের সভা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তাই গোদাগাড়ীর ব্যানারে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আয়োজিত সভার ব্যানারে ‘বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে’ লেখা অংশটুকু পরে মোটা সাদা কাগজে ঢেকে দেওয়া হয়। এর ওপরে লেখা হয় ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে’। আবার আয়োজক হিসেবে আগে লেখা ‘গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ’-এর ‘পরিষদ’ অংশটি ঢেকে দেওয়া হয়।

আগেই প্রিন্ট করা ব্যানার সংশোধন করে ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ করা হলেও মঞ্চের সামনে ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উপকারভোগী সাধারণ মানুষ। দলীয় নেতা-কর্মী তেমন ছিলেন না। দুপুরে এ সভায় আসা লোকজনকে খাওয়াতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ভোরেই বেশ কিছু পাতিলে বিরিয়ানি রান্না করা হয়। রান্নার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মো. মারুফ নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আজ শুক্রবার গোদাগাড়ী ইউনিয়নে এমপি মহোদয় সরকারি সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রস্তুতিমূলক কাজের কিছু স্থিরচিত্র। সার্বিক সহযোগিতায় মাসিদুল গনি মাসুদ, সুযোগ্য চেয়ারম্যান, ১ নম্বর গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত।’ এই বিরিয়ানির টানে অনেকে সভায় পরিবারসহ হাজির হয়। সভায় এমপির বক্তব্যের পর সবাইকে খেতে দেওয়া হয়।

মঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় এমপি ওমর ফারুক তাঁর ফেসবুক আইডিতে কিছু সময় সরাসরি সম্প্রচার করেন। তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসিদুল গণি। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজ জুমার দিন। ভবিষ্যতে নির্বাচন আসতেছে। ভালো থাকার জন্য আমাদের সবাইকে নৌকার সঙ্গে থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের যে নেতা, আমাদের সাংসদ, যিনি আমাদের চালান, আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীকে আগামী দিন নৌকায় ভোট দিবেন। দিবেন তো? আজ শুক্রবার, বলেন দিবেন? কথা বলেন, হাত তোলেন। নাহ! হাত তো বেশি উঠে না দেখি। একটু পরে বিরিয়ানি-মাংস খাওয়াব। সবাই হাত তোলেন দেখি।’ এ সময় কেউ কেউ হাত উঁচু করলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘যা-ই হোক চলবে, আলহামদুলিল্লাহ।’ এমপি ওমর ফারুক হাসিমুখে তখন লাইভ দিচ্ছিলেন।

বিকেল সাড়ে ৫টায় চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চর আষাড়িয়াদহ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সভার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ভাতাভোগীরা সভাস্থলে এসে বসে আছেন। তবে তখন পর্যন্ত এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পদ্মা নদী পার হয়ে সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। কিছু সময়ের মধ্যেই এমপির পৌঁছে যাওয়ার কথা বলেও জানান ওই ইউপি সদস্য।

এসব সভার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সভার বিষয়টি আমিও জানলাম। আচরণবিধি অনুযায়ী এটা করা যায় না। আমি একটা প্রতিবেদন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিয়ে দেব।’

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এবং প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের সভা এবং ভোট চাওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন। তানোরের সভার বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন। এটা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব। তারপর নির্বাচন কমিশন বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে অভিযোগ সম্পর্কে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তিনি আচরণবিধি পড়ে দেখেছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। প্রার্থী না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনের অধীন নন। আর নৌকায় ভোট চাওয়া যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়, তাহলে তফসিল ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল করেছে, সেগুলোও আচরণবিধি ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। অযথা প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত