সৌদিপ্রবাসী শাশুড়ির টাকার জন্য স্ত্রী ও খালা শাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ১৯: ০৬
Thumbnail image

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শাশুড়ির বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা না পেয়ে স্ত্রী ও খালা শাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শ্যালক আহত হয়েছেন। 

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হলহলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই জামাতা পালাতক রয়েছেন। 

বিষয়টি আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন। 

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মৌ আক্তার মিতু (২৫) এবং তাঁর খালা আলেয়া বেগম (৬৫)। মিতু রুবেল হোসেনের স্ত্রী এবং আলেয়া বেগম সোলায়মানের স্ত্রী। তাঁদের বাড়ি হলহলিয়া গ্রামে। ছুরিকাঘাতে আহত নীরব হোসেন (২২) আলেয়া বেগমের ছেলে। তাঁকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

ওই জামাতার নাম রুবেল হোসেন। তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। 

পুলিশ, নিহতদের স্বজন ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১০-১২ বছর আগে হলহলিয়া গ্রামের মৌ আক্তার মিতুর সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের বিয়ে হয়। তাঁদের নিঝুম আক্তার নামে আট বছরের মেয়েসন্তান আছে। মিতুর মা কমলা বেগম সাত বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে সৌদি আরব গেছেন।  

কমলা বেগম তাঁর মেয়ে মিতুকে হলহলিয়া গ্রামে জমি কিনে দিয়ে বাড়ি করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে কমলা বেগমের মেয়ে ও জামাতা হলহলিয়া গ্রামে বাস করছেন। কমলা বেগম সৌদি আরব থেকে তাঁর মেয়ে মিতুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে টাকা পাঠাচ্ছিলেন। এই টাকায় মিতু সংসারে খরচ চালানোর পাশাপাশি সঞ্চয় রাখছিলেন। 

এক সপ্তাহ আগে কমলা বেগম তাঁর মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুবেল হোসেন তাঁর স্ত্রী মিতুর কাছে শাশুড়ির বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চান। কিন্তু মিতু তাঁর স্বামীকে টাকা দিতে চাননি। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে নিহতের স্বজনদের আহাজারিএ নিয়ে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। রুবেল হোসেন ঘর থেকে গরু জবাইয়ের ছুরি এনে তাঁর স্ত্রী মিতুকে পুরো শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। তখন মিতু রক্ষা পেতে চিকিৎকার শুরু করেন। তাঁর চিৎকার শুনে তাঁর খালা আলেয়া বেগম ছুটে আসলে রুবেল হোসেন তাঁর পেটেও ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন আলেয়ার ছেলে নীরব হোসেন তাঁর মা ও খালাতো বোনকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও হাতে ছুরিকাঘাত করে রুবেল পালিয়ে যান।

গ্রামবাসী এসে রুবেলের স্ত্রী মিতু, তাঁর খালা আলেয়া বেগম ও নীরবকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাকসুদুল আলম আলেয়া বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় মিতুকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। আলেয়া বেগমের ছেলে নীরব হোসেনকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিস (ভারপ্রাপ্ত) ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মকসুদুল আলম আকন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মৌ আক্তার মিতুর পুরো শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, তাঁকে আমরা জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে পেয়েছি। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়, শুনেছি তিনি পথেই মারা গেছেন। আর তাঁর খালা আলেয়া বেগমের বুকে গভীর ক্ষত ছিল। তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, স্ত্রী ও খালা শাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর জামাতা রুবেল হোসেন পালিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত