পাবনায় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু, আহত ২০ 

পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ১৫
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ২৭

পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে সংঘর্ষে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াছিন আলম (৪০) মারা গেছেন। আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে ভাঁড়ারার চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। আহতদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

আহতরা হলেন—ভাড়ারা গ্রামের রিয়াদ হোসেন (২২), তুহিন আহমেদ (২৩), আব্দুর রহিম (৩৩), হোসেন আলী (৫০), রুবেল হোসেন (৩০), নলদহ গ্রামের আল্লেক শেখ (৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), আবু তালেব (৩২), তুহিন হোসেন (২৭) আব্দুল্লাহ (৩৫), লালু শেখ (৩৩) মোস্তফা (৪০) ও আল আমিন (২৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয়রা জানান, আজ সকালে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) সুলতান মাহমুদের ১৫-২০ জন সমর্থক নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় সুলতান মাহমুদের ভাতিজা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইয়াসিন আলমসহ দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী নেওয়ার পথে মারা যান ইয়াসিন আলম। 

মৃত ইয়াছিন আলমকে নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার জনি হোসেন বলেন, ‘বনপাড়া নামক স্থান অতিক্রম করার সময় মারা গেছেন তিনি। পরে মরদেহ নিয়ে পাবনায় ফিরেছি।’ 

ভাঁড়ারা ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার পরে আমার হয়ে যারা প্রচারণা করেছেন তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচজনের বাড়িতে গিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ ১০-১৫ জন মিলে গুলি চালিয়েছে। আমার হয়ে ভোট না করার হুমকিও দেয়। তখন থেকেই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পরে আজ সকালে আহতদের আমার সমর্থকেরা দেখতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার লোকের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং গুলি করে।’ 

সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার লোকজন ভোট চাইতে দিচ্ছে না। নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়া থেকে শুরু করে অফিস ভাঙচুরসহ আমাকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি শঙ্কার মধ্যে আছি।’ 

আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বরকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করে। আজ সকালে আমি তাঁকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর গুলি করে। এ সময় আমাকে চতুরদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন।’ 


পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকস কনসালট্যান্ট ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আহত ১০-১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভাড়ারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইয়াসিন আলমকে রাজশাহী নেওয়ার পথে মারা গেছেন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 
 
প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে পাবনার সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত