অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো সেই সেন্টু হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ১৯: ১৩
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৯: ৩৮

নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো এক ব্যক্তি রিকশা চালাচ্ছেন। তাঁর রিকশার পেছনে বসে আছেন যাত্রী। সম্প্রতি এ ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। ঋণের টাকা পরিশোধ ও চিকিৎসার খরচ জোগাতে অসুস্থ অবস্থায় রিকশা চালাতে বের হন মাইনুজ্জামান সেন্টু। এভাবে দুই দিন রিকশা চালানোর পর অসুস্থতার কারণে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।

সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকার কিস্তি দিতে হয় সেন্টুর। ওষুধ আর অক্সিজেনের জন্য তাঁর প্রতিদিন ৬০০ টাকা খরচ হয়। তাই কাজ না করে বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ নেই। গত শুক্রবার রিকশার সামনে অক্সিজেনের সিলিন্ডার তুলে নল লাগিয়ে নিয়েছিলেন মুখে। অসুস্থ শরীর নিয়ে শুরু করেন রিকশা চালানো।

ছবিটি ভাইরাল হলে রাজশাহীর এই রিকশাচালকের পাশে দাঁড়ান অনেকেই। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে সেন্টুকে দেখে এসেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। 

জেলা প্রশাসক সেন্টুর চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। এ ছাড়া অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

রিকশাচালক সেন্টুর বাড়ি রাজশাহী নগরীর কলাবাগান এলাকায়। সেন্টুর দুই মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন স্ত্রীকে নিয়ে সংসার সেন্টুর। কলাবাগান এলাকায় দুই হাজার টাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। সমস্যা রয়েছে হৃদ্‌যন্ত্রের। গত রোববার তাঁকে রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সেখানেই। 

সেন্টুর স্ত্রী চম্পা বেগম জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছিলেন সেন্টু। দুই বছর পর রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। এরপর আবার ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আরেকটি রিকশা কেনেন সেন্টু। এরই মধ্যে শরীরে বাসা বাঁধে হার্নিয়া। এর অপারেশনের জন্য আবার ঋণ করতে হয় ৫০ হাজার টাকা। এখন সব মিলিয়ে সপ্তাহে ১ হাজার ৩৫০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয় তাকে। 

হাসপাতালে সেন্টুকে দেখতে রাজশাহী জেলা প্রশাসকচম্পা বেগম বলেন, ফুসফুসের সমস্যার কারণে দেড় মাসের মধ্যে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এখন অক্সিজেন ছাড়া চলতেই পারেন না। গত পাঁচ মাস ধরে ওষুধ-অক্সিজেনেই খরচ রোজ ৬০০ টাকা। কিস্তি ও চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার রিকশায় তুলে মুখে নল লাগিয়েই রিকশা চালাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুই দিন পর শরীর বেশি খারাপ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বাড়িতে গিয়েও সব সময় অক্সিজেন লাগবে বলে চিকিৎসক একটা ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’ মেশিন কিনে নিতে বলেন। 

এই মেশিনটির দাম অন্তত ৫০ হাজার টাকা। সেন্টুর অক্সিজেন নল লাগিয়ে রিকশা চালানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে মেশিনটি কেনার জন্য ইতিমধ্যে একজন ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যেই আজ রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তাঁকে দেখতে যান। তিনিও এই মেশিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

তবে এখনো নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত রিকশাচালক সেন্টু। তিনি বলেন, ‘আমি কথা বলতে পারি না। একটু কথা বললে হাঁপিয়ে উঠি। চিকিৎসক বলেছেন ফুসফুসেও বড় সমস্যা। ভারী কাজ করা যাবে না। একটা সহজ কাজ দরকার, যেটা বসে থেকেও করতে পারব। তাহলে আমার সংসারটা চলবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমি জানি না।’ 

রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাসান তারিক বলেন, সেন্টুর সিওপিডি ও যক্ষ্মা আছে। তাই তাঁর ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়েছে। হার্টেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। হার্টে যে পরিমাণ অক্সিজেন যাওয়া দরকার তা যাচ্ছে না। তাই সেন্টু স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন নিতে পারছেন না। ‘কনসেনট্রেটর’ মেশিনটি কিনে নিলে তিনি স্বাভাবিকভাবে বাতাস গ্রহণ করতে পারবেন। তখন আর তাঁর অক্সিজেনের খরচ লাগবে না। 

জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ বলেন, ‘সেন্টুর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় জেলা প্রশাসন বহন করবে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিনটি আগে প্রয়োজন। তাই এই মেশিনটি তাঁকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার পর সেন্টুকে অফিসে ডাকা হয়েছে। তাঁর সমস্যা শুনে সমাধান করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত