আত্মহত্যা করতে চাওয়া বীরাঙ্গনাকে আশ্রয় দেন বান্ধবী, ছেলের বিয়ে দেন যুদ্ধশিশুর সঙ্গে

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন। বয়স এখন ৫০ বছর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করে ফেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মেরিনার নির্যাতিত মায়ের স্বীকৃতি মেলেনি। যুদ্ধের মানসিক ও শারীরিক আঘাত নিয়ে বেঁচে থাকলেও দারিদ্র্যের কশাঘাত নিয়ে বেশি দিন বাঁচেননি মা। দারিদ্র্যপীড়িত মেরিনাও পাননি স্বীকৃতি ও সহযোগিতা।

তাড়াশ পৌর শহরের উত্তর অপদাবাঁধ এলাকার বাসিন্দা মেরিনা। স্বামী ভ্যানচালক ওমর আলী। চার সন্তানের জননী যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন চরম দারিদ্র্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মেরিনা খাতুন বলেন, মা পচী খাতুনের মুখেই শুনেছেন—যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী অস্ত্রের মুখে মাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পে। পাঁচ মাস আটকে রেখে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে ক্যাম্প থেকে তাড়িয়ে দেয় বর্বরেরা। বিষপান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন পচী খাতুন। উপজেলার খাঁনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বান্ধবী ওমরজান খাতুন তাঁর জীবন বাঁচান ও আশ্রয় দেন। তাঁর বাড়িতেই ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি জন্ম হয় মেরিনার। অনাদর-অবহেলা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে বেড়ে ওঠে এক যুদ্ধশিশু।

এই গল্প বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন মেরিনা খাতুন। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলেন, ‘মায়ের ওই হৃদয়বান বান্ধবী তাঁর ছেলে ওমর আলীর সঙ্গে বিয়ে দেন আমাকে। ২০০৫ সালের শেষ দিকে মা মারা যান। এরপর বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে, দরিদ্রতাকে সঙ্গী করে ৪ সন্তান ও স্বামী নিয়ে খুব কষ্টে বেঁচে আছি।’

পচী খাতুনের মৃত্যুর কিছুদিন পর সেই বান্ধবীও মারা যান। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি মেরিনার সংসারেই ছিলেন।

উপজেলার বিশিষ্টজন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রহমান মিঞা, গাজী সাইদুর রহমান সাজুসহ অনেকেই যুদ্ধশিশু মেরিনার স্বীকৃতির দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গাজী আরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘পচী খাতুনের গর্ভে জন্ম নেওয়া যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য বহু চেষ্টা ও আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু এখনো স্বীকৃতি মেলেনি। যুদ্ধশিশুর স্বীকৃতির জন্য সরকারের কাছে মানবিক আবেদন করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত