ডলার সংকটের অজুহাতে মসলার দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: ভোক্তার ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ১৮: ০৬
Thumbnail image

জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কোরবানি ঈদের মসলা তিন মাস আগেই আমদানি করা হয়ে গেছে। ডলার সংকটের কথা বলে এলসি খুলতে না পারার অজুহাতে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খুলতে কোনো সমস্যাও নেই। 

আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহীর একটি তিন তারকা হোটেলে নিরাপদ খাদ্য সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিবিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মশালা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। 

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ডলারের কিছুটা সমস্যা আছে, কিন্তু জরুরি পণ্যের ক্ষেত্রে এলসির কোনো সমস্যা নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হয়েছে। আমাদের জরুরি পণ্যের জন্য ডলার কিন্তু আছে। এটা কিন্তু অজুহাত যে এলসি পাওয়া যাচ্ছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘সামনে কোরবানি। মসলার বাজারটাও অস্থির। বিশেষ করে এলাচের দাম অত্যধিক বাড়ছে। এলাচ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। অলরেডি সেগুলো চলে এসেছে। কোরবানির মসলা কিন্তু আরও তিন মাস আগে এসেছে। সেটি পুরোনো ডলারে মজুত আছে। এ জন্য খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকায় যে বাজার আছে, সেখানে আমরা কঠোর মনিটরিং করছি।’ 

ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনিটরিং জোরদার করেছি। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। দাম বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনতে যাই। তাতে করে বাজারের সাপ্লাই চেইনের ডিস্টার্ব হয় এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা ওই সুযোগটাই নেয়।’ 

ইভ্যালিকে আবারও ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার প্রসঙ্গেও এ সময় কথা বলেন ভোক্তা–অধিকারের ডিজি। তিনি বলেন, ‘ই-কমার্সকে গলা টিপে দিলে দেশেরই ক্ষতি হবে। ই-কমার্সকে চলতে দিতে হবে। ইভ্যালি কিন্তু একটি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান। তারা গ্রাহকদের সঙ্গে যে অন্যায় করেছে, সেটির জন্য ইভ্যালির এমডি রাসেল ২৭ মাস জেলে ছিলেন।’ 

তিনি বলেন, ‘এই সময়ে একটা বিষয় কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি হাইকোর্টের মাধ্যমে যে জামিনে বের হয়ে এসেছেন, তিনি কিন্তু ব্যবসার জন্যই বের হয়ে এসেছেন। আমরা যে প্রোটেকশন দিচ্ছি, সেই প্রোটেকশন একটা জায়গায়, তারা যদি বিজনেসে ফিরে আসতে পারে তখনই কিন্তু গ্রাহকের এই টাকাগুলো অ্যাডজাস্ট হবে এবং ইতিমধ্যেই তারা কিন্তু বিজনেসে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ভোক্তা–অধিকারের প্রায় ৮ হাজার মামলা আছে। সেখানে প্রথম পর্যায়ে ছোট ছোট যে পেমেন্টগুলো ছিল, সেগুলো কিন্তু আমরা পর্যায়ক্রমে দিয়ে দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আমরা একটা টাকা দেব। একটা জিনিস বুঝতে হবে, জেলে পুরে কিন্তু যে ভুল হয়েছে, সেটা ধরে থাকলে আপনি সামনে এগোবেন না।’ 

তিনি বলেন, ‘যারা এই দেশ থেকে মানি লন্ডারিং করে চলে গেছে, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আমি নামগুলো না বলি। কেউ কলকাতার জেলে, কেউ দুবাইতে পালিয়ে গেছে। কেউ আমেরিকায় আছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করে নিয়ে গেছে। তাদের এই ব্যাপারটি পুরোপুরি ঝুলে গেছে। যতক্ষণে এই টাকাগুলো দেশে না আসবে কিংবা তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে না আনতে পারব, সেটার তো বিচার করা যাচ্ছে। তাই শুধু ইভ্যালি না, যে প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারে—আমরা প্রত্যেকটিকে প্রোটেকশন দেব। তবে সেটি শৃঙ্খলার মধ্যে। এখন অ্যাডভান্স পেমেন্ট টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতারণার আর সুযোগ নেই। তারপরও যদি অন্যরকম অন্যায় করে, তাহলে তার ব্যবস্থা আছে।’ 

তবে ইভ্যালির মামলাগুলো আইনগতভাবেই মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে ভোক্তা–অধিকারের ডিজি বলেন, ‘ইভ্যালির এমডি যখন জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন, আমি কিন্তু তাকে প্রথম নোটিশ করি যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি না করলে ব্যবসা করতে পারবেন না। সেখানে তারা কমিটেড যে তারা আস্তে আস্তে এগুলো নিষ্পত্তি করবে এবং সে অনুযায়ী নিষ্পত্তি করছেও। তারা যদি ব্যবসা না করতে পারে, তাহলে তাদের টাকা কিন্তু দিতে পারবে না। তাই ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে। যেগুলো আইনের আওতায় বিচারাধীন আছে, সেগুলো আইনগতভাবেই তাদের মোকাবিলা করতে হবে।’ 

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য নূর মো. শামসুজ্জামান, রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

ইউএসএআইডি ফিড দ্য ফিউচার পলিসি অ্যাক্টিভিটি এবং বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ কর্মশালায় রাজশাহীর বিভিন্ন খুচরা, পাইকারি, আড়ত মালিক ও ডিলার পর্যায়ের ব্যবসায়ী এবং রেস্তোরাঁ মালিকেরা অংশ নেন। এই কর্মশালা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ক্যাবের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ভোক্তা–অধিকারের ডিজি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত