সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার গায়েবের অভিযোগ

সাইফুল মাসুম ও তিতাস আলম, লালমনিরহাট (কালীগঞ্জ) থেকে 
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ৩৪
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ৪৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় একচ্ছত্র আধিপত্য ফলানোর অভিযোগ উঠেছে। এই আসনে স্বতন্ত্রসহ অন্য প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলেও রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা, তুষভান্ডার, ভোটমারি ও দলগ্রাম এলাকা ঘুরে নৌকা ছাড়া অন্য প্রার্থীদের কোনো ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়েনি। 

বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নির্বাচনী মাঠে প্রশাসনের সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। বাকি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ও ফেস্টুন গায়েব করে দিচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মামলা ও হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া মন্ত্রীর বাবার নামে তৈরি সরকারি করিম উদ্দিন কলেজ ও করিম উদ্দিন আহমেদ পাবলিক পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে সবচেয়ে বেশি প্রিসাইডিং অফিসার নেওয়া হয়েছে। যা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা তৈরি করবে। 

জানা গেছে, কলেজের প্রিন্সিপাল মন্ত্রীর ছোট ভাইয়ের বউ রেশানুর চৌধুরী আর স্কুলের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজ্জামান আহমেদ। 

লালমনিরহাট-২ আসনের নির্বাচনে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সিরাজুল হক। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। সিরাজুল হক অভিযোগ করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমাজকল্যাণমন্ত্রী তার নির্বাচনী প্রচারে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নিজের মতো ব্যবহার করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলায় আমার পোস্টার লাগানোর পর তার লোকেরা রাতের আঁধারে তা গায়েব করে দিছে। আমার কর্মীদের মামলা ও হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি নির্বাচন কমিশনে লিখত অভিযোগ জানিয়েছি।’ 

লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) নির্বাচনী এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার কারণে মন্ত্রীর ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বেশ তোপের মুখে রয়েছেন বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন। মাহবুবুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনী সভায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও তাঁর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের দুর্নীতির কথা বলায় আমাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্রী গালিগালাজ করছে।’ 

এই আসনের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মমতাজ আলী শান্ত। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে খুব সক্রিয় হননি। শান্তর অভিযোগ, মন্ত্রীর লোকজন নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট-২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রত্যেক প্রার্থীকে বলা হয়েছে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা করার জন্য। তাঁদের পোস্টার হাওয়া হয়ে গেছে, এমন অভিযোগ এখনো কেউ আমার কাছে করেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’ 

তবে লালমনিরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি। প্রার্থীকে পরামর্শ দিয়েছি, অভিযোগের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে।’ 

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট-২ আসনের কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায় ১৪৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২ হাজার ২৯।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত